স্ত্রীর প্রতারণায় সর্বশান্ত প্রবাসী রফিকুল

স্ত্রীর প্রতারণায় প্রবাসী রফিকুল ইসলাম সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। রফিকুলের পাঠানো সব টাকা এবং সোনার গহনা নিয়ে পর পুরুষের হাত ধরে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে গেছে লিতুনজিরা খাতুন। এখানেই শেষ নয়, সে প্রবাসী রফিকুল ইসলামকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য পুরুষকে জীবন সঙ্গী করার সব আয়োজন চুড়ান্ত করেছে। রফিকুলের একমাত্র ছেলেকে দূরে সরিয়ে রাখায় পরিবারের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই।

নিজের পরিশ্রমের অর্থ আর সন্তান হারিয়ে রফিকুলের আজ তার দিশেহারা পাগলপ্রায় অবস্থা। প্রবাসী রফিকুলের বাপ মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একই অবস্থা। বংশের একমাত্র প্রদীপ নাতি ফাহিমকে কাছে না পেয়ে দাদী শেফালী খাতুনের দিন কাটছে চোখের জলে। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার কামারগন্যা গ্রামে। এ ঘটনায় প্রবাসী রফিকুলের বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় ও জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে পুত্রবধু ও তার বাপ মাকে আসামি করে মামলা করেছেন। জানা গেছে, ১০ বছর আগে বাঘারপাড়া উপজেলার শালবারাট গ্রামের সদর আলী মোল্যার মেয়ে লিতুনজিরার সাথে পারিবারিক ভাবে মালয়েশিয়া প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ওরফে পিকুলের বিয়ে হয়।

জাঁকজমকপূর্ণ সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের বছর না পেরোতেই লিতুনজিরার কোলজুড়ে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। বংশের একমাত্র প্রদীপ নাতি ছেলের আগমনে মহাধুমধাম করে নাম তার রাখা হয় ফাহিম হোসেন। ফাহিম ছিল দাদা দাদীর চোখের মণি। নিজের ছেলে সুদুর প্রবাসে জীবন কাটালেও নাতি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সময় পার করছিলেন বৃদ্ধ দম্পত্তি। স্ত্রী আর ছেলের ভোরন পোষনের জন্য প্রতি মাসে রফিকুল বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতেন।

কখনো বিকাশের মাধ্যমে কখনো ব্যাংকিং চ্যানেলে । এভাবে গত ১০ বছরে রফিকুল প্রায় অর্ধ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন স্ত্রী ও স্ত্রীর মায়ের নামে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই তিন মাসে রফিকুল বাড়ি করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ১৩ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন স্ত্রীর কাছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়া থেকে স্ত্রী ও ছেলের জন্য ১৪ ভরি স্বর্ণাংকার পাঠিয়েছেন রফিকুল।

আরো পড়ুন:
> পাইকগাছায় আর্ন্তজাতিক বন দিবস পালিত
> প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে পাইকগাছার আরো ৫২ পরিবার

পরিবারের অভিযোগ স্বামী বিদেশে থাকায় স্ত্রী লিতনজিরা জড়িয়ে পড়ে একাধিক পরকিয়ায়। স্থানীয় মাদ্রাসার এক শিক্ষকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শালিস বৈঠক পর্যন্ত হয়েছে। মানসম্মান আর সন্তানের কথা ভেবে সব মেনে নিয়ে সেই স্ত্রীকে নিয়েই সংসার করছিলেন প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ওরফে পিকুল ও তার বাপ মা। কিন্তু চোরাই না শোনে ধর্মের কাহিনী। লিতুনজিরা প্রবাসী স্বামীর পাঠানো টাকা নিয়ে ফুর্তি আর আড্ডায় মেতে ওঠে। সে একের পর এক পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। যা নিয়ে তার শশুর শাশুড়ির সাথে বাকবিতন্ডা হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ছেলে নিয়ে লিতনজিরা আলাদা সংসার পাতেন।

শুরু হয় তার বেআল্লাপনা। ঘন্টার পর ঘন্টা সে মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকে পর পুরুষের সাথে। স্বামী বিদেশ থাকায় সে ধরাকে সরা জ্ঞান ভাবতে শুরু করে। ছেলের এক মৌলভী শিক্ষকের সাথে তার পরকীয়া ছিল ওপেন সিক্রেট। রাতের পর রাত জেগে সে ওই মৌলভী স্যারের সাথে প্রেমালাপে মত্ত থাকতো। এসব খবর পেয়ে প্রবাসী রফিকুল দেশে আসার ঘোষনা দেন। স্বামীর দেশে ফিরে আসার খবরে বিনা মেঘে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে লিতনজিরার। সে স্বামীকে ফোন করে সাফ জানিয়ে দেয় এই মুহুর্তে তার বাড়ি আসার দরকার নেই। আর সে যদি স্ত্রীর কথা না শুনে বাপ মার কথা বিশ্বাস করে বাড়ি চলে আসে তাহলে সে ছেলের হাত ধরে যেদিকে মন চাই সেদিকে চলে যাবে।

এই খবর শুনে রফিকুল বাড়ি আসার পরিকল্পনা থেকে সরে যান। বিমান টিকিট করলেও তা কম দামে ফেরত দিয়ে কাজ করতে থাকে সুদুর মালয়েশিয়ায়। রফিকুলের মা জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বামীকে দেশে ফেরত আসা ঠেকিয়ে দিয়ে লিতনজিরা আবারও পরকীয়ায় মত্ত হয়ে ওঠে। সে তার চাচাত খালা নাছিমার মাধ্যমে বিশেষ বাহিনীর একজন সদস্যের সাথে পরকীয়ায় মেতে ওঠে। যা নিয়ে তার শশুর শাশুড়ির সাথে বচসা হয়।

এক পর্যায়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি করার জন্য স্বামীর পাঠানো সব টাকা পয়সা, সোনাদানা এবং ব্যবহার্য সব কাপড় চোপড় নিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় পাশের মাদ্রাসায় হেফজ পড়া ছেলে ফাহিমকে সাথে করে নিয়ে যায়। ওই রাতেই বহু খোঁজাখুজির পর বউমাকে না পেয়ে পর দিন মাদ্রাসায় গিয়ে আলতাফ হোসেন জানতে পারেন তার নাতি ছেলেকে বউমা নিয়ে গেছে।

আরো পড়ুন:
> পাইকগাছায় আর্ন্তজাতিক বন দিবস পালিত
> প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে পাইকগাছার আরো ৫২ পরিবার

এ খবর পেয়ে আলতাফ হোসেন ছেলের সাথে মালয়েশিয়ায় যোগাযোগ করে সব খবর জানান। ছেলের কথা মতো তিনি বউমার বাপের বাড়ি শালবারাট গ্রামে যান। কিন্তু বউ মা তাকে সাফ জানিয়ে দেন যে, সে আর স্বামীর ঘর করবে না। ছেলে ফাহিমকে সে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে। এসব কথা শুনে ভঘœমনে বৃদ্ধ অফালতাফ হোসেন বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন যেতে না যেতেই স্ত্রী লিতনজিরা স্বামী রফিকুলকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে সব সম্পর্কের অবসান ঘটান।

এসব ঘটনার পর শশুর আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় ও বাঘারপাড়া থানায় পুত্রবধুর সব অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে ৯মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত, কোতয়ালী যশোর (ভারপ্রাপ্ত) আদালতে একটি মামলা করেন। যার নম্বর সিআর-৫১৪/২০২৩। আদালত মামলা রেকর্ড করে আগামী ৫ জুনের মধ্যে ঘটনার তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য যশোর কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাদী আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ও আমার ছেলের জীবন অতিষ্ঠ করে বাড়ি করার জন্য জমানো সব টাকা পয়সা ও সোনারগহনা নিয়ে রাতের অন্ধকারে লিতনজিরা পর পুরুষের হাত ধরে পালিয়ে গেছে। আমার ছেলে একজন প্রবাসী। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় রোজগারের সব টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দিতো। কখনো ব্যাংকের মাধ্যমে , কখনো বিকাশের মাধ্যমে ০১৩০৯৩৭৪৮৩৯ এই মোবাইল নম্বরে সব টাকা পাঠিয়েছিল। এদিকে বংশের একমাত্র প্রদীপ নাতি ফাহিমকে হারিয়ে চোখের জল শুকাচ্ছে না দাদী শেফালী খাতুনের। একদিকে সংসারের অশান্তি, অন্যদিকে একমাত্র নাতী ছেলের অবর্তমানে গোটা বাড়িতে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। অপরদিকে লিতনজিরার আচার আচরন ও চালচলনে ক্ষুব্ধ পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

তারা বলেন লিতনজিরা চরিত্রহীনা। এই সংসারে আসার পর থেকে অশান্তি লেগেই ছিলো। সে প্রায়ই পর পুরুষের সাথে মোবাইলে কথা বলতো। স্বামী বিদেশ থেকে টাকা গহনা পাঠাতো আর ও দেশে থেকে ফুট্ট ফুটোং করতো। সাজগোজ করে পর পুরুষের সাথে মেলা মেশা করতো। বলতে গেলেই অশান্তি আর ঝগড়া ঝাটি করতো। শেষ পর্যন্ত স্বামীকে পথে বসিয়ে তার পাঠানো বাড়ি করার সব টাকা, পোষাক ও গহনা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

তবে শশুর বাড়ির লোকজনের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত লিতনজিরা। তিনি দাবি করেন স্বামীর অবর্তমানে শশুর বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি এক কাপড়ে ছেলের হাত ধরে শশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি চলে এসেছেন। যে স্বামী বিয়ে করে ছেলে স্ত্রী রেখে বিদেশ চলে যায় তার সাথে সংসার করা যায় না। এই কারনেই স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে দাবি করেন লিতনজিরা।

এদিকে বোন লিতনজিরার পারিবারিক অশান্তি এবং সংসার ত্যাগ করে বাপের বাড়ি চলে আসার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তার শশুর আইন আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন লিতনজিরার ভাই ইমরান হোসেন।

মার্চ ২১, ২০২৩ at ২০:০১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বিফা/সুরা