বন্ধ হচ্ছে না যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে ভৈরব-নূর-নবীর ঘুষ বাণিজ্য

পত্রিকায় লিখে কিছুই হবে না, টাকা সবাই খায়, রেজিস্ট্রি অফিসে টাকা ছাড়া কাজ হয় না, এটা সকলেরই জানা। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে ? তদন্ত তো ডিপার্টমেন্টের অফিসাররাই করবে। তারাও তো টাকা খায়। আমিও টাকা দিয়ে সব ঠিক করে ফেলবো। প্রয়োজনে সাংবাদিকদেরও টাকা দিয়ে সব ঠিক করে নেবো। অফিস-আদালতে টাকা দিলে সবই হয়। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যত পারুক লেখুক। আমি লেখার ভয় পায় নে। এভাবে দম্ভক্তি প্রকাশ করে বুধবার কথা বললেন যশোর রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও তার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। কোন কিছুই পরিবর্তন হয়নি রেজিস্ট্রি অফিসে। সব কিছু আগের মতই চলছে। দু’হাতে উপরি আয়ে ব্যস্ত ভৈরব চক্রবর্তী ও তার প্রধান সেনাপতি নূর নবী। রেজিষ্ট্রি অফিসে কোন কাজ করতে গেলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়।

রেজিষ্ট্রি করা ছাড়াও নকল কপি তুলতে ঘুষ, ভিজিট কমিশনে গেলে ঘুষ, দলিল পাওয়ার অফ অটর্নিতে ঘুষ, রদ ও রহিদে ঘুষ এমকি বায়না চুক্তিতে ঘুষ দিতে হয়। এক কথায় ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না এই অফিসে। আর এ টাকার ভাগ পান অফিসের সকলে। আর ঘুষ বাণিজ্যের এ প্রক্রিয়াগুলো হয়ে থাকে নকলনবিশ নূর নবীর মাধ্যমে। সূত্র জানায়, ভৈরব চক্রবর্তী ও নূর নবী সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

আরো পড়ুন :
>বাঘারপাড়া-অভয়নগরকে স্মার্ট উপজেলা গড়তে চান আরশাদ পারভেজ
>প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
>লালপুরে ভেজাল গুড় কারখানা মালিকের দুই লাখ টাকা জরিমানা

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত কাজের অনিয়ম ও দূর্ণীতির মূল হোতা ভৈরব চক্রবর্তী ও তার প্রধান সহযোগী নূর নবী। এরা দলিল লেখকদের যোগসাজসে ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকেন। এদের মাধ্যমে আসা টাকার ভাগ চলে যায় বিভিন্ন পর্যায়ে। আপনি যেই হোন না কেন, ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলে আপনার কাজ হবেনা কোনো ভাবেই। সূত্র জানায়, ভৈরব ও তার সহযোগী নূর নবী তাদের বিরুদ্ধে কে তথ্য সরবরাহ করেছে তাকে খুজে বের করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

যে সঠিক তথ্য দেবে তাকে উপযুক্ত পুরস্কার দেবে বলে অফিসে ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন স্টাফকে সন্দেহ করে তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করছে। এ যেন মাছ না পেয়ে ছিপে কামড় দেওয়া অবস্থা তৈরী হয়েছে। আব্দুর রহিম এক ব্যক্তি জানান, নকল তুলতে তল্লাশকারকদের তিন থেকে পাঁচশত টাকা দিতে হয়। তাছাড়া জমির নকল তুলতে গেলে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর নকল তল্লাশ ও তোলার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত যে টাকা নেওয়া হয়। তা চলে যায় ভৈরব চক্রবর্তী ও নূর নবীর কাছে। সরেজমিনে কথা হয়, নকল তুলতে আসা কেশবপুরের ভাল্লুকঘর এলাকার এনামুল হকের সাথে।

তিনি জানান, একটি জমির নকল তুলতে ভৈরব বাবুর কাছে পরামর্শের জন্য যাই। পরে ভৈরব বাবু আমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেন। কিন্তু আমি টাকা দিয়েও চার মাস ধরে নকলের জন্য ঘুরছি। এখনো নকল পায়নি। কবে পাবো তাও তারা জানাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানিয়েছেন, টাকা ছাড়া এই অফিসে কোন কাজই হয়না। টাকা দিলে দ্রæত কাজ হয়, না দিলে কাগজে এই ভুল তো ওই ভুলের কথা বলা হয়। অফিসের লোকজনের সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে এদের বিরুদ্ধে কোন কথাই বলা যায়না।

আরো পড়ুন :
>বাঘারপাড়া-অভয়নগরকে স্মার্ট উপজেলা গড়তে চান আরশাদ পারভেজ
>প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
>লালপুরে ভেজাল গুড় কারখানা মালিকের দুই লাখ টাকা জরিমানা

সূত্র জানায়, প্রতিদিন যে সব কাজ হয় দিন শেষে ঘুষের টাকা উত্তোলন করে নূর নবী। এখান থেকে রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর জন্য এবং একটি অংশ নিজের জন্য রেখে বাকী টাকা বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগবাটোয়ারা করেন। একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে কিভাবে অঢেল সম্পাদের মালিক হন তা বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন একজন দলিল লেখক। তিনি বলেন, দ্রæত এদের চরিত্র জনসম্মুখে উন্মোচন করে অবৈধ অর্থ দিয়ে উপার্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। পাশাপাশি তার অনৈতিক কাজে সহযোগীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ডিসেম্বর ২৮.২০২২ at ১৪:৪৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর