বিএনপির সমাবেশ ঘিরে দুপক্ষের হুঙ্কার

‘১০ ডিসেম্বর’ ঘিরে দেশের রাজনীতি এখন আবর্তিত হচ্ছে। এ দিন রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, এদিন কোনো একটা অঘটন ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি।  এছাড়া সমাবেশের স্থান নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ তীব্র হয়ে উঠেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমাবেশ দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনের সড়কে করতে চাইলেও পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এতে নাখোশ বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, যে কোনো মূলে পল্টনেই সমাবেশ করবেন তারা। এই সমাবেশ ঘিরে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি।

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। সাম্প্রতিক সভা-সমাবেশে চলছে প্রধান দুই দলের বাহাস। এ পর্যন্ত আটটি বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এবার ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চায় দলটি। অন্যদিকে ওইদিন আওয়ামী লীগও থাকবে রাজপথে। ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম মহাসড়ক ঢাকা-আরিচা সড়কের পাশে সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ।

যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি’র কারণ দেখিয়ে নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে অনমনীয় বিএনপি। সেক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগও। ওইদিন রাজধানীর সবগুলো প্রবেশপথ ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় সতর্ক অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা।

আরো পড়ুন:
আলহাজ্ব মো. শাজাহান খানের শেষ বিদায়ে লাখো জনতার ঢল
বিএনপি লাঠি আর আগুন নিয়ে এলে, খেলা দেখানো হবে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষেতলালে তিন সাংবাদিক সংগঠন একত্রিত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে ভয় পায় বিএনপি। ক্ষমতাসীনদের মতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে ভয় পায় বিএনপি। ওই ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। তাই তাদের কষ্ট লাগে। আর ডিসেম্বর এলে এই কষ্ট আরো বাড়ে। বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে কোনো বাধা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, বিএনপির সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেউ কোনো বাধা দেয় না। তারা তো সম্মেলনে কাঁথা-বালিশ, মশার কয়েল সবকিছু আগে থেকে নিয়ে সমাবেশে হাজির হয়। তবে তারা যদি লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে তাহলে আওয়ামী কর্মীরা কেউ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

নেতারা বলছেন, সারাদেশে সমাবেশের নামে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে বিএনপি। তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিরাও আগের তুলনায় তৎপর হয়ে উঠেছে। বিএনপি যাতে সমাবেশ নির্বিঘ্নে করতে পারেন, এজন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ ডিসেম্বরের বদলে ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে। কোনো সম্মেলন পিছিয়ে দেয়া সহজ হলেও এগিয়ে আনা সহজ নয়। তবুও বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বলেই ঘোঁজ ধরে আছে। এর পেছনে নানামুখী ষড়যন্ত্র দেখছেন ক্ষমতাসীনরা।

তাদের মতে, গত নির্বাচন বানচালে পেট্রোল বোমায় মানুষ মেরেছিল বিএনপি। এবার ১০ ডিসেম্বর নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র করছে। নয়াপল্টনের চারপাশে অসংখ্য অলিগলি। কোনো অঘটন ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়া সহজ। হেফাজতের শাপলা চত্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না সরকার। ফলে কোনোভাবেই সোহরাওয়ার্দীর বাইরে সামবেশের অনুমতি দেয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির সমাবেশ করার সুবিধার কথা ভেবেই সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিয়েছে। নয়াপল্টনের সামনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হতে পারবে। কিন্তু তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, তাহলে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।

নয়াপল্টনেই অনড় বিএনপি

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, কুমিল্লা ছাড়া কোথাও বিনা বাধায় সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ ঘিরেও পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সেখানে নতুন নতুন ‘গায়েবি’ মামলাও দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য খুঁজছেন তারা।

আরো পড়ুন:
আজকের খেলার ফিক্সচার
আকিজ ফুডে এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে অতীতের মতো রাস্তায় গাড়িতে আগুন দিয়ে ফের বিএনপির ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। সরকার ও সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট হবে না। মুখে এ কথা বললেও তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। কিন্তু বিএনপি কোনো ফাঁদে পা দেবে না।

সাংঘর্ষিক অবস্থানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি

অন্য সময় বিএনপি সোহরাওয়ার্দীতেই অনুমতি চায়, সরকার দেয় না। এবার অনুমতি পেয়েও কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বর্জন করছে- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আস্থাহীন সম্পর্কের কারণে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাংঘর্ষিক অবস্থানে চলে গেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যমতে পৌঁছানোর পরামর্শ তাদের।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, এ ধরনের হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই এসব হুংকার বাড়বে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।

নভেম্বর ৩০.২০২১ at ১০:০৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর