পাবনায় বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটিতে বিভক্ত: দায়ী হাবিব

দলের দূর্দিনে বার বার আহবায়ক কমিটি করেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি পাবনা জেলা বিএনপি। নতুন আহবায়ক কমিটিও বিভক্ত হয়ে পরেছে। এদিকে পাবনা জেলা বিএনপিতে গ্রুপিং ও বিভক্ত করার জন্য দায়ী হাবিবুর রহমান হাবিন বলে অভিযোগ করেছেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজ সরদার।

পাবনা জেলা বিএনপির দীর্ঘদিন সম্মেলন না করে, যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ণ ছাড়াই তিনবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র, অভিযোগ নেতাকর্মীদের। এ নিয়ে দ্ব›দ্ব ও কোন্দল তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীতেও তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না পাবনা জেলা বিএনপি।

জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি চলে আড়াই বছর। সে কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাদের উপর দ্বায়িত্ব ছিলো জেলার উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন এর নতুন করে কমিটি গঠন করে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জিবিত করা। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ প্রতিটি উপজেলায় কোন্দল গ্রুপিং বাড়ালেও কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নাই আহব্বায়ক কমিটি।

আরো পড়ুন :
পূজার বন্ধেও পরীক্ষা নেবে রাবির ফলিত গণিত বিভাগ

দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে আগের কমিটি ভেঙে গত এপ্রিল মাসে ৬ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে আবারও ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘ জটিলতার পর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এ কমিটির তালিকা গত ২২ আগস্ট পাবনায় পৌঁছে। সর্বশেষ আহব্বায়ক কমিটির কারণে অধিকাংশ নেতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ-বিভেদ দেখা দিয়েছে। অনেক নেতা কর্মী রাজনীতি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।

২০১৯ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছে আড়াই বছর। এ সময়ের মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় হাবিবুর রহমান হাবিব ও সিদ্দিক নতুন কমিটি গঠন করেছিলেন। মাত্র এক বছরের মাথায় নবগঠিত ৯টি কমিটিই আবার বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। পাবনা জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক ও সাবেক সহসভাপতি মাসুদ খন্দকারকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলের তৃনমূল পর্যন্ত।

জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। দীর্ঘদিনের কোন্দল অবসান হয় এবং পাবনা জেলা বিএনপি শক্তিশালী হয়। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় বিএনপি জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান আহ্বায়ক ও সিদ্দিকুর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়।

আরো পড়ুন :
গাঁজা হেরোইনসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার

তখনকার আহ্বায়ক কমিটি সে সময় জেলার ১৮ ইউনিট কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হন। যে ২/৩টি উপজেলায় কমিটি গঠন করেছিল, সেই কমিটিকে তখন মেনে নেয় নাই দলের বেশীরভাগ নেতাকর্মী। আহব্বায়ক কমিটির অদক্ষতায় বহুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

এরপরও প্রায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করে তিন মাসের জন্য গঠন করা এ আহ্বায়ক কমিটি। নানা অভিযোগ উঠতে থাকে কমিটির বিরুদ্ধে। গত এপ্রিল মাসে ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে ৬ সদস্যের ছোট নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এবার আবার ৬ সদস্যের কমিটি ভেঙে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলো। নবগঠিত এ কমিটিতে আবদুস সামাদ খান, আনিসুল হক, শেখ তুহিন ও নূর মোহাম্মদ মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ দিকে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনেও কোন্দল কাটেনি বিএনপির। দলের নির্যাতিত, ত্যাগী নেতাদের একটি বড় অংশকে বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন পদ বঞ্চিতরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির বঞ্চিত এক নেতা বলেন, যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক মামলা হয়নি,কখনও সে রাজপথে কোন আন্দোলনে ছিলেন না এবং এই আহবায়ক কমিটিতে যাদের সদস্য করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির যুক্ত নন। এদিকে নতুন আহবায়ক কমিটিতে আহবায়ক যুগ্ন-আহবায়ক ও সদস্য সচিবদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পরেছে। যুগ্ন-আহবায়কদের বাদ দিয়ে বা তাদের কোন সুপারিশ না নিয়ে অনৈতিকভাবে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনের চেস্টা করছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, যাঁরা কখনোই বিএনপি করেননি। তাঁরাই আজ বিএনপির নেতা। তাঁরা কখনো কোনো আন্দোলন সংগ্রাম করেননি।

আরো পড়ুন :
যবিপ্রবিতে স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অব নওগাঁর  নতুন কমিটি ঘোষণা

পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পাবনা-৪ আসনের সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা ট্রেন হামলা মামলার প্রথম সাক্ষী হাবিবুর রহমান হাবিব, তার জন্য ৪৭ জন আসামীর মধ্যে ১০জনের মৃত্যু দন্ড, বাদী বাকিদের যাবজ্জীবন ও ১০ বছরের জেল হয়, এই জন্য পুরো ঈশ্বরদীর নেতা কর্মীদের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা বলতে কিছুই নেই। এই হাবিব দলে যোগদানের পর থেকে বহুভাবে দলকে বিভক্ত করার চেস্টা করেছে।

২০০১ সালে দলে সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুড়াল মার্কা নিয়ে আওয়ামীলীগে সাথে যোগসাজসে বিদ্রোহী হয়ে হয়, তখন ঈশ্বরদী আটঘরিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আহ্বায়ক হওয়ার পর সারা পাবনায় বিএনপিকে ধংসের খেলায় মেতেছে হাবিব, হাবিবের জন্য আজ ৩বছর যাবত পাবনার ৯টি উপজেলায় রাজনৈতিক কোন কার্যক্রম হচ্ছে না, দল দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে পরেছে। এমন কি দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির কোন কর্মসূচি ও ঠিক মতো পালন হয় না। হাবিব, মাসুদ এর সাথে তৃণমূল পর্যায়ের দলের মানুষদের সম্পৃক্ততা না থাকাই আজ দল সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, একজন প্রমানিত ব্যর্থ নেতাকে নিয়ে জেলা বিএনপিতে বারবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গত তিন বছরে তিনি বিএনপির জন্য কিছুই করতে পারেননি। দল গোছানোর পরিবর্তে বিএনপিকে দু-তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। আবারও তাঁকেই আহ্বায়ক করা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে গেল। তবে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পাবনা জেলা ‘বিএনপিতে কোনো ভাগ নেই।

সেপ্টেম্বর ২৪,২০২২ at ১৯:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /মনর /শই