যশোরের চৌগাছার নারায়ণপুর বাহারাম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রির ৫ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয়সহ নানা অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি এএফএম কাশেম।
ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কার্যক্রমে এরইমধ্যে এএফএম কাশেম নিজের লিখিত জবানবন্দী প্রদান করেছেন। লিখিত জবানবন্দীতে তিনি বলেন বিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক মিঠু কোটচাঁদপুর পৌরসভার সচিব পদে চাকুরীরত থাকাকালীন বিষয়টি গোপন করে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। যা তিনি করতে পারেন না। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের দিন অভিভাবক সদস্য মো. তুহিনসহ অন্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদ্যালয় চত্বর থেকে বিতাড়িত করে প্রধান শিক্ষক এবং বর্তমান সভাপতি নিজেদের মত করে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন।
অভিযোগে তিনি বলেছেন, আমি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থাকাকালে ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন গাছ বিক্রয়ের ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার হিসাব চাইলে প্রধান শিক্ষক হিসাব না দিয়ে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করেন। ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ থেকে ৪টি সিলিং ফ্যান চুরি হয়ে যায়। বিষয়টি বারবার বলা সত্বেও তিনি প্রশাসনকে জানাননি। একই বছর বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ড হতে উত্তোলনকৃত টাকার মধ্যে ৩০ হাজার টাকা টাইলস না কিনে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন। এবিষয়েও আমি হিসাব চাইলে তিনি টালবাহানা করে হিসাব দেননি। একই বছর ইউনিয়ন পরিষদ হইতে প্রাপ্ত ৪২ হাজার ৫০০ টাকার হিসাব চাইলে তিনি দেননি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষকের ভাষ্যমতে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান জাল সার্টিফিকেটে কর্মরত। বিষয়টি যাচাই বাছাইয়ের জন্য প্রধান শিক্ষকের নিকট ওই লাইব্রেরিয়ানের সাটিফিকেট দেখতে চাইলেও তিনি দেখাননি। ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শফিকুর রহমান অবসরে গেলে বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান রাখার স্বার্থে এনটিআরসিতে শিক্ষক চাহিদা দিয়ে তিনি কোন আবেদন করেননি।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সভাপতি কোটচাঁদপুর পৌরসভার সচিব এটা সঠিক। তবে সেটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং তিনি সেখানে প্রথম শ্রেণির চাকুরি করেন। অন্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে শহিদুল ইসলাম বলেন, এএফএম কাশেমকে সভাপতি করা হয়নি বলে তিনি এসব অভিযোগ করছেন। বিদ্যালয়ের সকল হিসাব তাঁকে দেখিয়ে তাঁর স্বাক্ষর নেয়া আছে।
মোবাইল ফোনে এএফএম কাশেম বলেন, আমি দু’বার এডহক কমিটির সভাপতি থাকায় নিয়মানুযায়ী তৃতীয়বার সভাপতি হতে পারবোনা এটাতো পরিস্কার। তাহলে কেন সভাপতি হতে না পেরে এসব অভিযোগ করবো। তিনি বলেন ওই প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের অভিযোগ করার কারনে তিনি এই কথা বলছেন। তিনি বলেন ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা খরচ করে বিদ্যালয়ের একটি গেইটের একাংশ নির্মাণ, এবং সামান্য একটি জানালার গ্রিল তৈরি করেছেন। যা করতে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকাও খরচ হওয়ার কথা নয়। সরেজমিনে তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামান অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মার্চ ১৪.২০২২ at ১৯:০৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মই/জআ