বাড়ি ধ্বসের শঙ্কায় ভৈরব পাড়ের শত শত মানুষ

বাড়ি ধ্বসের শঙ্কায় ভৈরব পাড়ের শত শত মানুষ। ভৈরব নদ খননের নামে বালু উত্তোলণের ব্যাপক প্রস্তুতিতে একটি চক্র। সম্প্রতি সময়ে বালু উত্তোলনের প্রভাব শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ঘোষপাড়া অংশে বেশ কিছু বাড়ি ঘর ভেঙে পড়ে। সে রেশ কাটতে না কাটতেই আবার খননের নামে শহরের কাজীপাড়া তেঁতুলতলা অংশে মাটি বালু উত্তোলনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ অংশে বালি উত্তোলন প্রস্তুতিতে নতুন করে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এত উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অনেক বাড়ি মালিকসহ শত শত মানুষ।

বিশাল ড্রেজার মেশিন স্থাপন ও শ’ খানেক বড় পাইপ জড়ো করার ঘটনায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খননের নামে বালি উত্তোলন রোধ করে বাড়িঘর রক্ষার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্রæত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

যদিও পাউবির দাবি, উৎকণ্ঠার কিছুই নেই। যা কিছু হচ্ছে তা ভৈরব নদ খনন সিডিউল ও নীতিমালা অনুযায়ীই হচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে যশোরের শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় ভৈরব নদের অদুরে থাকা পুকুর এবং নদীপাড়ের নিচু জমিগুলো একে একে ভরাট করা হয়। সুবিধাবাদী পুকুর মালিকগন বিকল্প মুনাফা আশায় ভৈরব নদ খননে ব্যবহার হওয়া ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করেছেন। ওই বছর একদিকে অর্ধশত পুকুর ভরাট হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে ডোবা নিচু জমি ভরাট হয়েছে শ’শ’ বিঘা। গত বছরের বিভিন্ন সময়ে ভৈরবের বুকে ড্রেজার চালিয়ে বালি ওঠনোই ভূমি ধ্বসেরও শঙ্কা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে যশোরের পুরাতনকসবা ঘোষপাড়ার মানুষ ছিলেন বেশি শঙ্কায়। বালি উত্তোলনের কারণেই গত বছরের ৫ ও ৬ জুলাই ঘোষপাড়ার বাড়িঘর ভেঙে নদে পড়ে যায়। ওই বছর জুড়ে ঠিকাদার নিযুক্ত লোকজন ও কয়েকটি দালাল চক্রের লোকজনের মধ্যস্থতায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হয়। ভৈরব নদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘ পাইপ লাগিয়ে বালি কাঁদা মাটি তুলে পুকুরগুলো ভরাট করা হয়। আর ওই ভরাট কার্যক্রম করতে গিয়ে পাশের গ্রামগুলোর বাড়ি ঘরের তলদেশ মাটি বালি শূণ্য হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। এর মধ্যে ভয়াল থাবা পড়ে পুরাতন কসবা ঘোষপাড়ায়। ভেঙে পড়ে ৫০টি ঘর। ওই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বিশাল ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে কাজীপাড়া তেতুলতলা অংশে। জড়ো করা হয়েছে শ’ খানেক বড় বড় পাইপ। লম্বা লাইন ধরে পাইপ চলে যাচ্ছে অনেক দুরে। অভিযোগ এসেছে উদ্দেশ্য ভরাট কার্যক্রম। আর নেপথ্যে কাড়ি কাড়ি টাকার হাতবদল হয়েছে।

ওই অংশে বালু মাটি উত্তোলন করা হলে তেঁতুল তলা ও ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে বাড়ি ঘর ভূমি ধ্বসের আওতায় পড়তে পারে বলে একাধিক ব্যক্তি শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এর আগেও ওই অংশে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছিল এবং সেখানে গভীর তলদেশ ও গর্তের সৃষ্টি আগে থেকেই আছে। আবার নতুন করে বড় ড্রেজার মেশিন বসানোয় শঙ্কা বাড়ছে।

আরো পড়ুন:
দরিদ্রদের জন্য বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রকল্প
একই ঘরে সংসার পেতেছেন দুই বোন

গত বছরের জুলাইয়ে ৫০টির মত বাড়ি ঘর ধ্বসে পড়ায় তাদের শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও দাবি তাদের। এর আগে ভৈরব থেকে ১শ’ মিটার পর্যন্ত ১৬ ফিট গভীর করে মাটি ও কাঁদা বালি উত্তোলন করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিযুক্ত লোকজন এক ঢিলে দু’পাখি শিকার করেছেন। একদিকে সরকারের কাছ থেকে ভৈরব খনন বিল উত্তোলন করছেন, আবার ভরাট করে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাজীপাড়া তেঁতুলতলা অংশ ঝুঁকিতে পড়বে। তাই দ্রুত বালি উত্তোলন বন্ধ করার দাবি তাদের।

এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন নদ নদীতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ আসছে। যা শঙ্কার বিষয়। এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়কে পত্র দিয়ে কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেছেন, নদ খননে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। পাউবো খনন বুঝে নিয়েছে বা নিচ্ছে। ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি দেয়া, কারো ব্যক্তিগত ভরাট ও অর্থবাণিজ্যের বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে কাজীপাড়া তেঁতুলতলা অংশে বিধি ও সিডিউল মোতাবেক ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। ওই অংশ খননে ড্রেজার মেশিন ছাড়া ভাল বিকল্প নেই। নির্ধারিত মাপে মাটি কাদা বালি কাটা হবে। এখানে ভূমি ধ্বসের সুযোগ নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর স্থানীয় মানুষ যে শঙ্কা করছেন তা অমুলক। এরপরও ওই তথ্যের ব্যাপারে তিনি সরেজমিনে খোঁজখবর নেবেন।

ফেব্রুয়ারি ২৮.২০২২ at ১৪:০৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আক/জআ