লালপুরে শীতকালীন সবজি চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা

নাটোরের লালপুরে অনুকূল আবহাওয়া আর বাজারে চাহিদা ও দর ভালো পাওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভের মুখদেখছেন এই অঞ্চলেরর সবজি চাষীরা। উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রয় করে চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আয় হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ বলছে অনুকুল আবহাওয়া আর উর্বর জমি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কম মূলধনে স্বল্প সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। সবজি চাষে খুব বেশি আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। সবজিতে রোগবালাই দমনে বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না।

প্রায় দিনই বাজারে বিক্রি করা যায়, অন্য ফসলের বেলায় যা সম্ভব নয়। চলতি মৌসুমে সবজির দাম ভালো পাওয়ায় হাসি ফুঁটে উঠেছে সবজি চাষীদের চোখে মুখে। সব মিলিয়ে এই উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা এখন সবজি চাষকেই লাভজনক মনে করছেন। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে শীতকালীন আগাম সবজির চাষ।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে রবি মৌসুমে এই উপজেলায় ৮৩৫ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি (বেগুন ৮৫, লালশাক ৭০, মূলা ৬০, সীম ৬০, লাউ ৬০, ঢেড়শ ৬০, মটরশুটি ৫০, মিষ্টিকুমড়া ৫০, টমেটো ৪৫, পেপে ৪০, পটল ৩০, ডাটা ৩০, ফুলকপি ২৫, করলা ১৫, বাঁধাকপি ১২, গাজর ১০, বরবটি ১২ ও ধনেপাতা ৮ হেক্টর) চাষ হয়েছে। এই সকল জমি থেকে প্রায় ১৪ হাজার ৬২০ মেক্টিকটন সবজি উৎপাদন হবে। যার মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। ইতি মধ্যে উপজেলা জুড়ে প্রায় ১৭ কোটি টাকার আগাম সবজি বিক্রয় হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকার আগাম সবজি বিক্রয় হয়েছে উপজেলার কদিমচিলান ইউপিতে। এই ইউনিয়নে ৯৭ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে।

সকাল থেকে সরেজমিনে উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে ঘুরে দেখা যায়, পৌষের কনকনে শীতের কুয়াশা মাখা সকাল। এর মধ্যেই সকাল থেকে সবজির ক্ষেত পরিচর্যায় মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষকরা তাদের জমি থেকে সবজি তুলে বিক্রয়ের জন্য নিকটস্থ চাঁনপুর ও দাইড়পাড়া সবজি আড়ৎ এ নিয়ে আসছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এই আড়তে এসেছে তাদের সবজি ক্রয়ের জন্য।

এসময় আব্দুল জলিলসহ কয়েকজন সবজি চাষির সঙ্গে কথা হয় তারা বলেন, ‘অন্য ফসলের তুলনায় কম সময়ে আগাম সবজি চাষ করে কয়েকগুণ বেশি টাকা আয় হওয়ায় আমরা সবজি চাষ করেছি। সবজি চাষ করে প্রতিদিন বাজারে বিক্রয় করে টাকা পাওয়া যায়। মূলধনও কম লাগে।’

আরো পড়ুন :
বীরগঞ্জে গিনি টি এন্ড ক্যাফে এর উদ্ভোধন
বছরের প্রথম দিনেই আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেল দুটি কারখানা

সবজি চাষী সুরুজ আলী বলেন, সবজি চাষে অন্য ফসলের তুলনাই রোগবালাইও কম হয়। স্বল্প সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। এবছর বাজারে সবজির দামও চাহিদা বেশ ভালো। আগামিতে সবজির চাষ আরো বাড়বে বলে জানান এই কৃষক।’

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান,‘মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮৩৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে।

এই সকল জমি থেকে ৩৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বর্তমানে সবজির দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছে সবজি চাষীরা। উৎপাদিত সবজি উপজলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত সবজি ঢাকাসহ দেশের অন্য জেলাতে সরবরাহ করা হবে। আগামিতে এই উপজেলায় সবজি চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।’

জানুয়ারি ০২.২০২১ at ১৬:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোআরটু/রারি