দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার এড়াতে ভুয়া দুদক কর্মকর্তার জালে দূর্নীতিবাজ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ধরা! প্রতারক আটক

সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনার বিরুদ্ধে। এরপর খুলনা দুদক অফিসার পরিচয় দিয়ে ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ফোন করেন এক যুবক। দুদকে অভিযোগ হয়েছে এবং টাকা নাদিলে এক ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে এমন কথাও জানানো হয় মোবাইলে। এরপর অভিযোগ খারিজ ও গ্রেফতার এড়াতে বিকাশ, নগদ ও রকেট নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রদান করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা।

দূর্নীতি দমন কমিশনের নামে আমলা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিল্পপতিসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করতো মোহাম্মদ শরীফ মিয়া নামে এই প্রতারক ।

এ ঘটনায় গত ৫ নভেম্বর কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনার স্বামী ডা. আব্দুল্লাহিল কাফী।

মামলার এজাহারে স্বামী ডা. আব্দুল্লাহিল কাফী উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালের ৬ জুন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামীমা শিরিন লুবনার ফোনে ফোন করেন অজ্ঞাত যুবক। তিনি নিজেকে খুলনা দুদক অফিসের অফিসার পরিচয় দেন এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হয়েছে। এরপর উক্ত অভিযোগ খারিজ করে দিবেন বলে দেখা করতে বলেন ও ৫০ হাজার টাকা দিলে কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান। এরপর টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্ত্রীর চাকুরির ক্ষতি ও গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি। আত্মসম্মানের ভয়ে তার স্ত্রী একটি নম্বরের বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্টে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এরপর জানতে পারেন তিনি ভুয়া।

কালীগঞ্জ থানার এসআই জাকারিয়া মাসুদ জানান, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৬ নভেম্বর কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ময়মিনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পরশিপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ শরীফ মিয়া নামে ওই  ‍ভুয়া দুদক কর্মকর্তাকে আটক করেছে। এ সময় তার কাছ থেকে ৭৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:
করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধের বাজার মূল্য ৭০ টাকা
টুঙ্গিপাড়ায় গাভী পালন ও গরু মোটাতাজাকরণ কোর্সের উদ্বোধন

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামীমা শিরিন লুবনার দূর্নীতি ও সাধারন মানুষের সাথে দূরব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে কালীগঞ্জের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ দূর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বারকলীপি প্রদান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ হাসপাতালের একজন কর্মচারি জানান ২০২০- ২০২১ অর্থবছরে করোনাকালীন বরাদ্দকৃত অর্থের ৩১টি বিলের বিপরীতে ২৪ জুন ২০২১ তারিখ সাড়ে ছয়লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন সাবেক এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামীমা শিরিন লুবনা। একই অর্থবছরের স্টেশনারি সামগ্রীর মালামাল ক্রয়াদেশ ব্যতীত ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে এই খাত থেকেও টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য শামীমা শিরিন লুবনার মুঠোফোনে (১৯৩৩৪৯৬৫৬৬) বারবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্বামী ডাক্তার কাফী জানান, তিনি এখন ব্যস্ত আছেন পরে দেখা করে কথা বলবেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর স্থানীয় ও জাতীয়সহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয় “করোনায় হোটেলে না থেকেও চিকিৎসকদের বিল ৫৭,৬০০ টাকা!” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। করোনা প্রণোদনার তিন লাখ টাকা হরিলুটের ঘটনায় হৈচৈ পড়ে যায় স্বাস্থ্য বিভাগে। এরপর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তে টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ মেলে। তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে বদলি করা হয়।

নভেম্বর ০৯.২০২১ at ১৯:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বহব/জআ