ভিপিএনে মেতেছে গ্রামের কিশোররা, মেধাশুন্য হওয়ার আশঙ্খা

ঝিকরগাছা বালিয়া গ্রামের ক্লাস সেভেনে পড়ে জাহিদ। সে জানে কী করে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করতে হয়। জাহিদের বয়সী ও তার চেয়ে বড়, ছোটরাও চালাচ্ছে ভিপিএন। তা দিয়ে দেদার চলছে ফ্রি ফায়ারসহ আরও অনেক গেমস।

করোনাকালে গ্রামের শিশু-কিশোররা প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়েছে অনেক। একদিক দিয়ে এটি আশার খবর হলেও চিন্তা বাড়াচ্ছে তাদের গেমস আসক্তি। সকালে, বিকালে, সন্ধ্যার পর চায়ের স্টলে, পুকুর পাড়ে বা গাছ তলায় লাইন ধরে বসে চলছে গেম খেলা। পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধের পর এ চিত্র খানিকটা বদলালেও ভিপিএন-এ চলছে গেমগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, কিছুদিন আগেও সন্ধ্যার পর নির্ধারিত স্থানে জড়ো হয়ে একসঙ্গে ৮-১২ জন দল বেঁধে গেম খেলতো। সংখ্যাটা এখন ২-৫ জনে দাঁড়িয়েছে। পাবজি বন্ধ হওয়ার পর সংখ্যাটা কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি।

জাহিদের বন্ধু রাকিব বললো, ‘সরাসরি মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে ফ্রি ফায়ার-পাবজি খেলতে আমরা পিং টাইম (ল্যাটেন্সি) পেতাম ৭০ বা ৮০ এমএস (মিলি সেকেন্ড)। ভিপিএন দিয়ে পাই ৭০০, কখনও ৮০০ এমএস। এতে গতি কম থাকায় অনেকেই খেলতে চায় না।’

চলছে অন্য সব গেমস, থামছে না খেলা
ফ্রি ফায়ার, পাবজি বন্ধ তাতে কী! অন্যান্য গেমের পাশাপাশি গ্রামে বেশ চলছে ‘সসেজ ম্যান’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালিয়া গ্রামের এক কৃষক জানালেন, ‘কী যে ওরা খেলে জানি না। দিন-রাত মোবাইলেই পড়ে থাকে।’ তার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে মোবাইলে কী খেলে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তার। মোবাইলে ক্লাস হবে জেনে ১২ হাজার টাকা দিয়ে স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ক্লাস আর হয়নি। উল্টো দিনরাত ছেলে পড়ে থাকে ফোন নিয়ে। সন্তানকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘বারণ করলে শোনে না। বলে, আমি কিছু বুঝবো না। আমাদের অতো পড়াশোনা নেই। তাই কিছু বলতেও পারি না। ঘরে আর কতক্ষণ আটকে রাখা যায়।’

সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন বেশি খেলা হচ্ছে ফোর্টনাইট, ভ্যালোরেন্ট, লিগ অব লিজেন্ড, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস, ক্ল্যাশ রয়্যাল, ড্রিম লিগ ২০২০, সাবওয়ে সারফার্স, ফিফা-২০২০, কাউন্টার স্ট্রাইক, কল অব ডিউটি ইত্যাদি।

ভিপিএন বন্ধ হবে না
সরকার ঘোষণা দিলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি ফ্রি ফায়ার। পাবজি প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হলেও ফ্রি ফায়ার কোথাও এখনও পুরোপুরি উন্মুক্ত। এ ছাড়া ভিপিএন ব্যবহার করেও এটি খেলা যাচ্ছে। চলছে একই ধরনের অন্য গেমও। পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধের পর ব্যান্ডউইথের ব্যবহার মাত্র এক শতাংশ কমেছে।

প্রসঙ্গত, দেশে একন ব্যবহার হয় ২৬৪৯ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড)। প্রায় ২৬ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার কমেছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হার স্বাভাবিক। গেমস বন্ধের কারণে যে কমেছে তা এখনই বলা যাবে না।

ভিপিএন বন্ধে সরকারের কোনও উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান , ‘চাইলেই ভিপিএন বন্ধ করা যাবে না। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক অনেক কর্মকাণ্ড জড়িত। বন্ধ করলে আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই বন্ধ না করে, মনিটরিং শক্ত করা হবে।’

গেমসের পেছনে ৪০০ জিবিপিএস
দেশে যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় তার অর্ধেকের বেশি অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্লাটফর্ম। এ ছাড়া, ইউটিউব ও পর্নোগ্রাফি, অনলাইন গেমস এসবের পেছনেও যাচ্ছে ব্যান্ডউইথ। এর মধ্যে ৪০০ জিবিপিএস’র বেশি ব্যান্ডউইথ যাচ্ছে গেমসের পেছনে। এমনটা জানিয়েছেন, দেশে ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক। তিনি বলেন, সরকার গেম দুটো বন্ধ করেছে। কিন্তু বিকল্প পথে অনেকেই খেলছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

সেপ্টেম্বর ০৯.২০২১ at ১১:৪১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বাট্রি/জআ