পাবনায় সরকারী জমি দখল করে সাবেক এমপির অবৈধ মার্কেট!

পাবনায় যমুনা নদী পাড়ের সরকারী জমি দখল করে সুবিশাল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। পাবনা ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর নেতৃত্বে সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত প্রায় ৫ একর জমি দখল করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এমপি বাজার নামে পরিচিত এই অবৈধ স্থাপনা ২০১৮-১৯ সালে নির্মিত হলেও অজ্ঞাত কারণে জমি উদ্ধারে কোনই ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। সম্প্রতি, নতুন করে মাটি ভরাট করে বাড়ানো হয়েছে মার্কেটের পরিধি, বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্লট।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নগরবাড়ী এক সময় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ছিল। যমুনা নদী পাড়ে নগরবাড়ী ফেরী ঘাট নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে পার্শ্ববর্তী কাজীরহাটে সরিয়ে নিলে স্থানটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। ফেরী ঘাটের পাশের স্থানটিতে একসময় নলখোলা মথুরাপুর হাট ছিলো। তবে, তা প্রায় ৩০ বছর আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আজিজুল হক আরজু এ স্থানটিতে মাটি ভরাট করে মার্কেট নির্মানের উদ্যোগ নেন। উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদকে সম্পৃক্ত না করে কোন অনুমোদন ছাড়াই যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে মাটি ভরাট শেষে নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে ২৬৪টি প্লট করে বিক্রি করে দেন। এমপির নিকট থেকে প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা পরে এসব জমিতে আরসিসি পিলার করে আধাপাকা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। দোকান মালিকরা জানান, প্রতিটি ৩২ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট চওড়া প্লট পেতে তাদের কাছ থেকে সাবেক এমপির প্রতিনিধিরা নিয়েছেন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা। টাকা প্রাপ্তির রশিদ দিলেও, জমির জন্য দেয়া হয়নি কোন কাগজ বা চুক্তিপত্র।

গত শনিবার নগরবাড়ীতে এমপি বাজার বলে পরিচিত মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় নতুন করে আবারো নদী থেকে বালি তুলে ভরাট করার কাজ চলছে। এসব জমিতে নতুন প্লট বরাদ্দ দেয়ার কাজও প্রায় শেষ। আর এসব প্লট বরাদ্দের দায়িত্বে রয়েছেন হঠাৎ করেই আওয়ামীলীগ নেতা বনে যাওয়া এক সময়ের প্রভাবশালী জামায়াত নেতা ইমান আলী মোল্লা।

প্লট বরাদ্দ পাওয়া আনিস এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, তিনি সাবেক এমপি আরজুর প্রতিনিধিদের তিন কিস্তিতে ১.২৫ লাখ টাকা দিয়ে প্লটটি পান। এরপর প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে একটি আধা-পাকা ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

জমি বরাদ্দের জন্য কোন রসিদ বা জমির কাগজ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে জমির জন্য কোন দলিল বা চুক্তিপত্র নেই। সাবেক এমপি আরজু সাহেবের আশ্বাস পেয়েই এখানে বিনিয়োগ করেছি।

অন্য একটি প্লটের মালিক মোসলেম উদ্দিন বলেন, সাংসদ থাকাকালীন আরজু সাহেব নদীর পাশে বিস্তীর্ণ জমি বালি দিয়ে ভরাট করে এবং বাজার স্থাপনের জন্য নদীর পাশে ইটের প্রাচীর তৈরি করেন। বাজার নির্মাণে আমরা এমপির উপর ভরসা করেই বিনিয়োগ করেছি। এমপি বাজারটি নির্মাণ করায় দোকান মালিকরা এর নাম দিয়েছেন এমপি বাজার।

পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ বলেন, নবনির্মিত বাজারের স্থলে এক সময় নলখোলা মথুরাপুর হাট নামে একটি বাজার ছিলো, যা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে আমি তৎকালীন সংসদ সদস্য আজিজুল হক আরজুকে সরকারী বরাদ্দের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের জন্য হাটটি পুননির্মানের অনুরোধ জানাই। কিন্তু তিনি তা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে সেগুলো প্লট আকারে বরাদ্দ দিয়েছেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদ তথা সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

রফিকুল্লাহ আরো বলেন, মার্কেটটির জমি ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত, সড়ক ও জনপথের জমিও রয়েছে। সাবেক এমপি স্থানীয় প্রশাসন থেকে এসব জমিতে মার্কেট নির্মানে কোন অনুমোদনও নেননি।

আরো পড়ুন:
৩০’র পর পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান না সিঙ্গাপুরের তরুণরা
মোস্তাফিজকে যেভাবে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ

মার্কেট নির্মাণে বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে, কোন অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করেছেন পাবনা- ২ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তবে, নদী দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, শতাব্দী প্রাচীন মথুরাপুর হাটের জমি নতুন করে জেগে উঠলে খাস জমিতে বর্তমান বাজার স্থাপন করা হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দল মনোনয়ন না দেয়ায়, সংসদ সদস্য হতে পারিনি। এ কারণে জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি। লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া প্লট মালিকদের কাছ থেকে জমির উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বাবদ পরিচালনা কমিটি ৯৭ হাজার ১০০ টাকা করে নিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত লাভের কোন বিষয় নেই বলেও দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামান বলেন, নগড়বাড়ীতে কোন জমি লিজের আবেদন আমরা কখনোই পাইনি। লিজ দেয়ার সুযোগও নেই। আমাদের জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। শেষ হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

পাবনা জেলা প্রশাসক, বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, সরকারী খাস সম্পত্তিতে স্থাপনা তৈরী করে তা বিক্রি বা বন্দোবস্ত দেয়ার বিধান নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আগস্ট ৩১.২০২১ at ১২:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মত/জআ