মহাস্থান এনসিডিপি গ্রোয়ার্স মার্কেট এখন মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে!

বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান গ্রোয়ার্স মার্কেট মধ্যস্বত্বভোগীরা কৌশলে দখলে নিয়েছে। ফলে কৃষকরা এখানে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

২০০০সালের দিকে মহাস্থানে ২টি গ্রোয়ার্স মার্কেট ও ৩টি সেড নির্মাণ করা হলেও সময়ের ব্যবধানে তা মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে চলে যায়।

প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানে এই গ্রোয়ার্স মার্কেট ও সেড চালু করা হয়েছিলো। এটি ‘উত্তর-পশ্চিম শষ্য বহুমুখীকরণ’ প্রকল্পের (এনসিডিপি) আওতায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এই মার্কেট ও সেডের মাধ্যমে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করবেন। কিন্তু এ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে এমনই দৃশ্য মিললো মহাস্থান গ্রোয়ার্স মার্কেট ও সেডে। মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়েছে সবকিছু।

জানা যায়, নারীর সম্পৃক্ততা ও ক্ষমতায়নের বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হলেও মার্কেটে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নিজেদের ভিতরে নারীদের নাম দিয়ে মার্কেটগুলো দখলে নিয়েছে বিশেষ সুবিধাভোগী মহল।

নারী তো দূরের কথা অন্য পুরুষ ব্যবসায়ীদের উচ্চ মূল্যে ভাড়া দিয়ে গ্রোয়ার্স কর্তৃপক্ষকে সীমিত ভাড়া দেখিয়ে ফায়দা নিচ্ছে সুবিধাভোগী মহল।

৩৩টি উচ্চমূল ফসল (ফল, সবজি, মসলা ও দানা শশ্য) বহুমুখীকরণ ও নিবিড় করণের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন, দারিদ্র হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সামনে একটি তালিকা বসিয়ে কৃষক সমিতির নামে ডাকের মাধ্যমে প্রকল্পটি নেয় তারা।

প্যাকিং হাউস, গ্রেডিং, শর্টিং, ওয়াশিং, ড্রাইং ইউনিট, লোডিং, আনলোডিং এরিয়া, স্টোরেজ গোডাউন, নারী কর্নার, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যালয় তথা ট্রেনিং সেন্টার, স্যানিটারি ল্যাট্রিনসহ ড্রেন, রাস্তা ও ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয় এসব মার্কেটগুলোতে।

মার্কেট এলাকার এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কৃষকদের একটি অংশ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করবেন। কৃষকদের মধ্যে কেউ এসব পণ্য ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যাবেন। এ জন্য কৃষকদের কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত কৃষকরা।

এটি দেখা শোনা করে আসছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়াই এসব বাজারের মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু খুচরা বাজারের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকরা লাভবান হতে পারেনি।

কৃষকদের অভিযোগ, খুচরা বাজার পরিচালনা কমিটির গাফিলতি ও জেলা বাজার কর্মকর্তার তদারকি না থাকা এর জন্য দায়ী।

বগুড়ার মহাস্থানের খুচরা বাজার এখন এসব মধ্যসত্ত্ব ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। প্রভাব খাটিয়ে তারাই বাজারের মালপত্র টাকার বিনিময়ে ভবনের ভিতরে রাখছেন।

সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়, গ্রোয়ার্স মার্কেটে (এনসিডিপি) ভবনে দূরের কৃষকের কৃষিপণ্য রাখার জন্য টাকা নেওয়া হয় উচ্চ মূল্যে৷ ভবনের ভিতরে গ্রোয়ার্স মার্কেটর পরিচালক আইনুর ইসলাম এখানে বিভিন্ন সবজি কিনে ব্যবসা করছে।

আইনুর ইসলামের সাথে সোহাগ নামেরও এক ব্যক্তি মিলে মিশে ব্যবসা করছে এই গ্রোয়ার্সে। আইনুরের বাড়ি মহাস্থান হলেও সোহাগের বাড়ি বাগেরহাট জেলায়।

মহাস্থান (এনসিডিপি) গ্রোয়ার্স মার্কেট বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে ছিলো, প্রান্তিক কৃষকরা এখানে উৎপাদিত মালামাল সংরক্ষণ করবেন এবং বিক্রি করবেন। বাস্তবে কৃষকদের সুবিধা তো দূরের কথা উল্টো স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ীদের ঐ মার্কেটগুলো ইজারা দেয়া হয়েছে।

যা থেকে প্রতি মাসে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। কেউ কেউ আবার প্রতি সপ্তাহ চুক্তি করে রাখছেন তাদের বিক্রিত বস্ত্র।

এনসিডিপির ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, প্যাকিং হাউস, গ্রেডিং, শর্টিং, ওয়াশিং, ড্রাইং ইউনিট নামের একটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে এক আলু ব্যবসায়ীকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই আলু ব্যবসায়ী জানান, আগে যেখানে ১২’শ টাকা প্রতিমাসে ভাড়া দিতাম এখন তা বাড়িয়ে নিচ্ছে ৩হাজার টাকা।

মোকামতলা এলাকার জাহেদুল ইমলাম জানান, এখানে তারা বেশ কয়েকজন ব্যবসা করেন। প্রতি বস্তা সবজি ৮ থেকে ১০ টাকা দিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্রোয়ার্স মার্কেট যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তারা অনেকেই এখানে ব্যবসা করেনা।

এদিকে (এনসিডিপি) গ্রোয়ার্স মার্কেটের মেয়াদ নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে! সরকারি নিয়মনীতি মোতাবেক এসব গ্রোয়ার্স মার্কেট নিলামের মাধ্যমে হস্তান্তর যোগ্য। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও দেওয়া হচ্ছেনা নিলাম।

আরো পড়ুন:
দিনাজপুর চেম্বার’র্স নির্বাচনে ৮ জনের মনোনায়ন প্রত্যাহার

মহাস্থান গ্রোয়ার্স মার্কেটের পরিচালক আইনুর ইসলাম বলেন, এখনও আমাদের মেয়াদ অনেক রয়েছে। প্রতিমাসে আমরা জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে টাকা পরিশোধ করি।

নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে নারী মার্কেট কারা পরিচালনা করছেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, নারীরা বাজারে এলে নানা লাঞ্ছনা ও বঞ্ছনার শিকার হবেন তাই তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

গ্রোয়ার্স মার্কেটের সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে, জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, জেলা শহরে নারী ব্যবসা এখনো বিকশিত হয়নি। মহাস্থান গ্রোয়ার্স মার্কেটের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আমি অন্যত্র বদলী হয়েছি। তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না। নতুন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এলে তার সাথে যোগাযোগ করবেন।

স্থানীয় রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথাও বলেছি। নজরদারি না থাকা ও কাগজপত্রে গরমিল থাকার সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা এর সুযোগ নিচ্ছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মে কুলসুম সম্পা বলেন,বিষয়টি জেনেছি। বাস্তব অবস্থা বুঝে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।