জয় হোক ভালোবাসার: আজ বসন্ত বরণ উৎসব এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

আজ পহেলা ফাল্গুন। এবারের এই দিনটি অনন্য হয়ে ধরা দিয়েছে বাঙালি জীবনে। এ দিন একইসঙ্গে পালিত হচ্ছে বসন্ত বরণ উৎসব এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এদিকে, দিন কয়েক আগেই করোনার টিকা মানুষের নাগালে এসেছে। আশা জাগছে খোলা হাওয়ায় অবাধে ঘুরে বেড়ানোর দিন বুঝি শিগগিরই ফিরে আসছে। সবমিলিয়ে আজকের দিনটি করোনামহামারী সত্বেও হয়ে উঠবে আনন্দমুখর।

বিশেষ দিনটি বরণ করে নিতে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রিয়জন ও বন্ধুদের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেছেন। অনেকে সকাল হতেই করোনা মহামারীর ভয় উপেক্ষা করে পথে বেরিয়ে আসবে অপরূপ সাজে। এরই মধ্যে সেজেছে রাজধানীর শাহবাগ, টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থান। বাদ যায়নি দেশের জেলা শহরগুলোও। সম্পূর্ণ প্রস্তুত হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। তরুণীদের মাথায় শোভা পাবে নানা রঙের ফুলের রিং, ভ্রমর কালো খোঁপায় থাকবে গোলাপের আগুনরাঙা হাসি। তরুণরাও থাকবে সমানই উচ্ছ্বাস মুখর।

‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নামে অধিক পরিচিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবস শুধু তরুণ-তরুণীদের জন্য নয়, নানা বয়সের মানুষের জন্যই এখন অনুরাগ প্রকাশের এক সুবর্ণিল দিন। এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসিরও। শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন? এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণের ছোট জবাব, `সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।`

তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরাও ভালোবাসা দিবসে আনন্দে মেতে ওঠে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগে গ্রাম-বাংলাতেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিং বক্স ভেসে যায় অনুরাগের উষ্ণ কথার স্রোতে।

ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা জুটি খুঁজে বাসা বাঁধতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পাতাহীন গাছগুলোতে কচি কিশলয় জেগে ওঠে। তীব্র সৌরভ ছড়ায় ফুল। জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ চারদিকে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

ভালোবাসার অনন্য এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস, এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, আলিঙ্গনে আবদ্ধ খেলনা মার্জার কিংবা বই শৌখিন উপহার হিসেবে প্রিয়জনকে উপহার দিতে পছন্দ করে নর-নারীরা। নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু`ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে হৃদ্যতার প্রিয়তম প্রকাশ।

আজকের দিনের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার প্লাবন বয়ে আনে। চলে উপহার দেওয়া-নেওয়া।

এক চিকিৎসক বাবা ও খ্রিষ্টান পাদ্রী সন্ত ভ্যালেনটাইনের নামে দিনটির নাম হয় `ভ্যালেনটাইনস ডে`। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সন্ত ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির নিচে তিনি নাম সই করেছিলেন `ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন`। ফাদার ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করে। এরপর দিনটি বিশেষভাবে পালনের রীতি ক্রমে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। তবে দিবসটি সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরো পরে, ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে।

দিনটি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে আরো একটি কারণ আছে। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি `জুনো` উৎসব পালন করতো রোমানরা। রোমান পুরাকাহিনীতে বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনো। তার নামেই উৎসবের নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারি করে নাচের সঙ্গী বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান হয়ে ওঠে `জুনো` উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি `ভ্যালেনটাইনস ডে` হিসেবে উদযাপন শুরু করে। সময়ের স্রোতে এটি ইউরোপ এবং পরে ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।