রাবির ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প রি-টেন্ডার করে পছন্দের ঠিকাদারকে দেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে না পারায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ রি-টেন্ডার করার অভিযোগ উেেঠছে প্রকৌশল শাখা ও পরিকল্পনা উন্নয়ন দফতরের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। টেন্ডারের সকল শর্ত পূরণ করার পরেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩টি কাজের রি-টেন্ডার করা হয়েছে। যে তিনটি প্রকল্পের কাজ রি-টে-ার করা হয়েছে সেগুলো দুই পার্সেণ্ট কমিশনে চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। রহস্যজনক কারণে তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, অবৈধভাবে রি-টে-ার প্রক্রিয়া করাসহ এ সংক্রান্ত নানা অনিয়মের সাথে পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তর ও প্রকৌশল শাখা’র কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরাসরি জড়িত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাবি’র প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র জানায়, রাবির প্রধান প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) মোঃ আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাশেম, পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খন্দকার শাহারিয়ার রহমান, একই দপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান প্রমুখ কতিপয় ঠিকাদারের সাথে বিশেষ সখ্যতার গড়ে তুলেছেন। এর সুবাদে তারা পছন্দের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের নিয়ে সরকারি নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে একের পর এক টেন্ডার সংক্রান্ত অনিয়ম করে চলেছেন।

এদিকে, টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ঠিকাদার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ। তাদের অভিযোগ, টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে সরাসরি যুক্ত রাবি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের করেকজন প্রকৌশলী-কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে রাবি শিক্ষক কোয়ার্টারের জন্য ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজটি সর্বনিন্মœ দরদাতা হিসেবে মেসার্স শিকদার কনন্সট্রাকশন এন্ড বিল্ডার্সের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে না দিয়ে কাজটি রি-টেন্ডার করা হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কার ফেজ-১ এর কাজটির সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে পিইএল এন্ড জিজিইএল জেভি ছিল।

অজ্ঞাত কারণে এ প্রতিষ্ঠানটিকেও কাজ না দিয়ে রি-টেন্ডার করা হয়। এছাড়া প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কার ফেজ-২ এর কাজটির জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল এইচসিপিএল-সিটিএল সিটিআইজেভি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ প্রতিষ্ঠানটিকেও কাজ না দিয়ে রি-টেন্ডার করা হয়েছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিকাদারদের সূত্রে জানা গেছে, যে তিনটি প্রকল্পের কাজ রি-টেন্ডার করা হয়েছে সেগুলো দুই পার্সেণ্ট কমিশনে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ১০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কার ফেজ-১ এর কাজটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পিইএল এ- জিজিএল জেভি’কে দুই পার্সেণ্ট কমিশনে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত।

এছাড়া ৬ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কার ফেজ-২ এর কাজটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এইচসিপিএল এ- সিটিএল জেভি’কেও দুই পার্সেণ্ট কমিশনে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আর ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষকদের ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজটি মেসার্স কবির সিন্ডিকেট লিমিটেড এ- মেসার্স কে.কে এণ্টারপ্রাইজকে দুই পার্সেণ্ট কমিশনে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোটানি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার গোলাম কাউসার চাকরীতে যোগদানের পর থেকেই কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ করে আসছেন। ঠিকাদারী কাজে জড়িত প্রকৌশল শাখা’র সহকারী স্টোর কিপার রাতুল। তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেমের অধিনে স্টোরের দায়িত্ব পালন করেন।

তারা বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করেন বেনামে। এছাড়া কোটেশনের কাজগুলো রাতুলকে দিয়ে করান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম। তিনি পানি সরবরাহ শাখার দায়িত্বেও আছেন। অভিযোগ উঠেছে নিজস্ব মিস্ত্রি দ্বারা রাবি স্টোরের মালামাল দিয়ে কাজ করান ও কোটেশনের বিল বিভিন্ন নামে তুলেন এই কর্মকর্তা।

এছাড়া বারী, বাদশা, আল-আমিন, মতিহার ট্রেডার্স আমজাদ হোসেনসহ বিভিন্ন লাইসেন্সে ঠিকাদারী কাজ করান বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে রাবিতে প্রকৌশলীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।

একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, টেন্ডার ডন, রাতুল, মামুনসহ পছন্দের ঠিকাদারদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দেন নূরে আলম মামুন। তিনি প্রকৌশল শাখার নিম্নমান সহকারী সমমান (চেইনম্যান)। এই নূরে আলম মামুনকে ঠিকাদাররা মিস্টার ৫% বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ ঠিকাদারদের ফাইল পাস করানোর জন্য ফাইল প্রতি ৫% টাকা নিয়ে থাকেন তিনি।

এছাড়া টাকা না দিলে চেক আটকানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক।

অভিযোগ রয়েছে, রাবি প্রশাসন ভবনের প্রকৌশলীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছেন টেন্ডার ডনসহ কর্মচারী সিন্ডিকেট।

এছাড়া কোটেশনের ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার কাজগুলোও নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। গত এক যুগের ব্যবধানে আঙ্গুল ফলে কলা গাছ হয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে বোটানি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. গোলাম কাউসার বলেন, আগে ঠিকাদারী কাজ করেছি। বর্তমানে আমার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। তাই আর কাজ করিনা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।

প্রকৌশল শাখা‘র সহকারী স্টোর কিপার রাতুল বলেন, আমি কোন ঠিকাদারী কাজ করিনা। জড়িতও ছিলাম না।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার মমতাজুর রহমান ডন বলেন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে আমি নিয়মিত ঠিকাদারী কাজে অংশ গ্রহণ করি এবং ইজিপি‘র মাধ্যমে ব্রাইট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে পাওয়া কাজগুলো ক্রয় করে কাজ করে থাকি।

ইজিপি‘র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে গোপন সখ্যতার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আর অন্য সব ঠিকাদারদের মতই আমি কাজ করে থাকি। তবে আমি কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই।

প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইজিপি‘র মাধ্যমে যে টেন্ডারগুলো হয়, সেগুলো আমরা শুধুই দেখভাল করি। কোটেশনের কাজগুলো নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এছাড়া অন্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাশেম বলেন, এসব ব্যাপারে আমার কোন কিছু জানা নেই। তিনি প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়েই ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খন্দকার শাহারিয়ার রহমান এর মুঠো ফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন। তবে কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দেন তিনি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।