ম্যানেজার ও সেলসম্যানের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

যশোরের চৌগাছায় সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিবেশক জিম এন্টারপ্রাইজের মালিক মোফাজ্জেল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।

রবিবার বিকেলে চৌগাছা রিপোর্টার্স ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্টিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জিম এর্ন্টারপাইজের মালিক মোফাজ্জেল হোসেন।

এ সময় তিনি বলেন, চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে সিনজেনটা কোম্পানীর মালামাল বিক্রয় করা হয়। ব্যবসার সুবিধার্থে ২০১৭ সালে যশোর সদর উপজেলার হুদা জগমহনপুর গ্রামের ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু কলুর ছেলে মোঃ হাসানকে ৭ হাজার টাকা বেতন চুক্তিতে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের দোকানে মালামাল পৌছে দেয়ার জন্য ওই সালেই চৌগাছার গরীবপুর আদর্শ স্কুলপাড়ার মোঃ বেলার ছেলে মোঃ রানাকেও তিনি নিয়োগ দেন।

ব্যবসায়ীক নানা কাজে সে বেশির ভাগ সময় চৌগাছার বাইরে অবস্থান করেন। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে ম্যানেজার মোঃ হাসান ও মোঃ রানা মিলে প্রতিষ্ঠান হতে প্রায় ৩ কোটি টাকা সরিয়ে ফেলে। ব্যবসায় লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি খোজ নিতে শুরু করি এবং টাকা সরিয়ে ফেলার বিষয়টি বুঝতে পারি।

এ সময় অভিযুক্ত দুইজনের কাছে জানতে চাইলে তারা হিসেব দেয়া তো দুরের কথা আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় আমি চৌগাছা থানায় একটি মামলা করলে পুলিশ চৌগাছার মোঃ রানাকে আটক করতে সক্ষম হয়। তবে এখনও আত্মগোপনে আছেন প্রধান আসামী ম্যানেজার মোঃ হাসান। আমি যখন টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করছি ঠিক সেই সময় প্রধান আসমাী যশোর প্রেসক্লাবে একটি মনগড়া সংবাদ সম্মেলন করে। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আমি সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা সরিয়ে ম্যানেজার মোঃ হাসান ও সেলসম্যান মোঃ রানা এখন কোটিপতি। চৌগাছার রানা অত্যান্ত গরীব ঘরের ছেলে, তার বাবা মোঃ বেলা ইঞ্জিন চালিক নছিমন চালায়। মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতনে রানা আমার দোকানে চাকুরী করত। অথচ মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে সে এখন কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক।

এক বছরেই ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে জমি কিনে সেখানে নির্মান করেছে ফ্লাটবাড়ি। নিজ গ্রামসহ আশ পাশের গ্রামে তার লাখ লাখ টাকার জমি বন্ধক রাখা আছে। যে ব্যাক্তি ৩ বছর আগেও থাকত ঝুপড়ি ঘরে সে থাকে এখন ফ্লাট বাড়িতে, শুধু তাই না বাড়ির ওয়াসরুমে সে ফ্যান লাগিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

একই অবস্থা আমার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজরা মোঃ হাসেনর ক্ষেত্রও। তার বাবাও নছিমন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন অথচ তারাই এখন গ্রামের সেরা বড়লোক বনে গেছেন। দুই ব্যাক্তি মিলে আমাকে পথের ভিকারী বানিয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি।

একজন আটক হলেও কৌশালে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রধান আসামী ম্যানেজার মোঃ হাসান। সুচতুর ম্যানেজার মোঃ হাসান ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে হঠাৎ সংবাদে সম্মেলন করে নিজেকে সাধু সাজার চেষ্টা করছে। এই দুই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি খুয়া যাওয়া টাকা যাতে তিনি ফেরত পান তার জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংবাদ সম্মেলন হতে।

এ বিষয়ে ম্যানেজার মোঃ হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সবই মিথ্যা। আমি সিনজেনটার পরিবেশক মোফাজ্জেল হোসেনের কাছে ৫২ লাখ টাকা পাই। এই টাকা দিবে না বিধায় তিনি মনগড়া উক্তি করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় গরীবপুর গ্রামের হুসাইন আহমেদ, শামীম রেজা, আরিফ হোসেন, এনামুল হক, রবিউল ইসলাম, পিকুল হোসেন, আজিজুর রহমান, মনোয়ারা বেগম, শিল্পি খাতুন, রমেজা বেগম, আঃ গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১৪ নভেম্বর, ২০২০ at ১৯:১৭:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/এমএআর