চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে ভাঙন, হুমকির মুখে ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি

যশোরের চৌগাছায় একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়ক, ফসলি জমি এমনকি বসতবাড়ি। বছরের পর বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারনে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসি। বালু উত্তোলনের কারনে এক সময়ের সমতল ভূমি এখন হয়েছে গভীর জলাকার।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসি বালু উত্তোলন বন্ধ করার পাশাপাশি যে সব ব্যক্তির কারণে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলার পাতিবিলা ও হাকিমপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী পাতিবিলার মাঠ থেকে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে বালু উত্তেলান করে আসছে।

মাটির নিচ হতে বালু তোলার কারণে পাতিবিলা মাঠের মধ্যে চৌগাছা-কোটচাঁদপুর প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল জলাকার। প্রশাসন মাঝে মধ্যে ঘটনাস্থলে হানা দিয়ে আর্থিক জরিমানাসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জম নষ্ট করলেও এর রেশ কাটতে কাটতে না কাটতে আবারও শুরু করা হয় বালু তোলা। মেইন সড়কের পাশ দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সম্প্রতি সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসি ভাঙন স্থানে লাল কাপড় বা গাছ গাছালি দিয়ে পথচারীদের সতর্ক করছেন। ভাঙন যদি এখনই মেরামত করা না হয় তাহলে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন পথচারীসহ এলাকাবাসি।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাতিবিলা গ্রামের মৃত শামছুল বিশ্বাসের ছেলে আব্দুস সালাম, সাবেক মেম্বার বাদল হোসেন, আশারেফ হোসেন, সাবেক মেম্বর বিশারত হোসেন বিষেসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বালু তোলার কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তারা নানা কৌশলে বালু উত্তোলন করে মাঠের বিঘার পর বিঘা সমতল ভূমি আজ পুকুরে পরিণত করেছে।

মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ হতে সেখানে অভিযান চালালে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার শুরু করা হয় বালু তোলা। সম্প্রতি প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের সরঞ্জম আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর নানা কৌশলে তার আবারও বালু তোলার কাজ শুরু করেছে।

এলাকাবাসি আশংকা করছেন বছরের পর বছর যে পরিমাণ বালু তোলা হয়েছে তাতে চরম হুমকির মুখে আছে পাশ্ববর্তী গ্রাম গুলো স্থানীয় মাঠ ও চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়ক। ইতোমধ্যে মাঠের অনেক জমি ভেঙ্গে পুকুরে মিশে গেছে, ভাঙন দেখা দিয়েছে সড়কে। বালু তোলার সাথে সম্পৃক্ত আব্দুস সালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ হতে বিধিনিষেধ থাকায় বালু উত্তোলন বহুলাংশে কম করে দিয়েছি।

বড় ভাই সাবেক মেম্বর বাদল হোসেনের পুকুরের পাড় সমান করার জন্য ড্রেজার মেশিন লাগানো হয়েছে। পাড় (গাবি) কাটা হয়ে গেলে কাজ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা হবে। সাবেক মেম্বর বিশারত হোসেন বিশে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ হতে অভিযান চালিয়ে আমার বালু তোলার সব সরঞ্জম নষ্ট করে দেয়া হয়, মুলত এরপর হতে আমি বালু তোলা বাদ দিয়েছি।

জেলা পরিষদ সদস্য দেওয়ান তৌহিদুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু তোলা একটি জঘন্যতম অপরাধ। গুটি কয়েক ব্যক্তির কারণে সড়ক, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এর একটি প্রতিকার হওয়া দরকার বলে আমি মনে করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী মোঃ এনামুল হক বলেন, চৌগাছাতে নতুন এসেছি, খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে যাদের কারণে সরকারী সম্পদসহ বসতবাড়ি মাঠঘাট হুমকির মুখে পড়েছে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ২১:৪৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/এমএএস