যশোরের শেখহাটির ইবাদুল দেদারছে চালাচ্ছে ভেজাল সারের রমরমা ব্যবসা

যশোরের শেখহাটির আলোচিত ইবাদুল ইসলাম ভেজাল সারের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিস ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসা করছে দীর্ঘদিন ধরে। গভীর রাতে টন টন ভেজাল সার দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। ভেজাল এ সার ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক সমাজ।

সূত্র জানায়, কারখানাতেই সারারাত ধরে তৈরি হয় ভেজাল দস্তা সার। চুন, সুরকি, ডলোমাইট, সিমেন্ট, ছাই, ইটের গুঁড়াসহ ক্ষতিকারক বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল দস্তা সার। ভেজাল সার ব্যবহার করে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কপাল খুলছে ইবাদুলের। সার ব্যবসায়ী অনেকের ধারণা অবৈধ এ ব্যবসার মাধ্যমে ইবাদুল ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। আলোচিত ইবাদুল একসময় ছিল ভবঘুরে।

অপরাধীদের সাথে ছিল তার মেলামেশা। হঠাৎ ভেজাল সার ব্যবসার মাধ্যমে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত শেখহাটিতে তার কারখানায় ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন করছে। সূত্র মতে, সিনজেনটা, ফ্রেশ জিংক, আমেরিকান জিংকসহ নামি-দামি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট নকল করে এই ভেজাল সার বাজারজাত করা হচ্ছে।

এই সার ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পরবর্তী ফসলের ওপরও পড়ছে। সূত্র আরও জানায়, প্যাকেটের গায়ে ঢাকার বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করেন। যেসব ঠিকানার কোন অস্তিত্ব নেই। আবার উৎপাদিত সার রাতারাতি পিকআপ ভ্যান, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন বাহনে করে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সার উৎপাদনে কৃষি বিভাগের কোনো অনুমোদন বা বৈধতা নেই। তারপরও অদৃশ্য খুঁটির জোরে বুক ফুলিয়ে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেখহাটির একাধিক ব্যক্তি জানান, ইবাদুল একজন আন্তর্জাতিক মানের টাউট। দেশের মন্ত্রী, এমপি, ডিসি, এসপি, কৃষি কর্মকর্তাসহ যার যার কথা বলবেন সবাই তার বন্ধু বা আত্মীয়।

একবার তার সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন, সে কত বড় ধুরন্ধার। যখন যে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে, তখনই খোলস পাল্টে ধুরন্ধর ওই ব্যক্তি বনে গেছে সেই দলের নেতা, কর্মী বা সমর্থক। বর্তমানে ভেজাল সার ব্যবসার মাধ্যমে তিনি লাখপতি। ভেজাল সার উৎপাদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইবাদুল ইসলাম যশোরের কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকদের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা আমার বন্ধু।

শুধু তাই নয়, যশোরের একটি সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতিসহ একটি ইউনিয়নের সভাপতিও তার বন্ধু। একটি ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তার ছোট ভাই। একটি দৈনিক পত্রিকার ও সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে বলেন, ওই পত্রিকায় তার ছেলে সাংবাদিক। তিনি আরও বলেন, পুলিশে বন্ধুসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে।

প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় তার লোক রয়েছে। ফলে ব্যবসা চালাতে তার কোন সমস্যা হবে না। নতুন শুরু করেছেন বলে উল্লেখ করেন। সূত্র জানায়, কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের দুর্নীতি-পরায়ণ কর্মকর্তাদের আর্থিকভাবে ম্যানেজ করে তিনি কারখানায় ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ভেজাল সার উৎপাদককে বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়ে গেছে। আমার কাছে বেশ কিছু তথ্য আছে, আমরা খুব দ্রুত অভিযান শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ভেজলকারীদের কোন ছাড় হবে না।

শুধু ওই ব্যক্তিই নয় যশোর জেলায় অন্তত অর্ধশতাধিক ভেজাল সার কারখানায় একই রকম সার উৎপন্ন হচ্ছে। এসব সার ব্যবসা বন্ধে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জোরালো কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘদিন অভিযান চালানো হয় না ভেজাল সার কারখানা ও উৎপাদককারীদের বিরুদ্ধে।

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১৮:১৮:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বিএমএফ/এমএএস