যশোরে ওসিসহ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ

জেলা জজ আদালতের আদেশ অমান্য করায় যশোর কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লিটন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে ব্যাপারে ২৯ সেপ্টেম্বর সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার একটি মামলায় জব্দকৃত গাড়ি জিম্মাদারের আবেদনের শুনানি শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক সাইফুদ্দীন হোসাইন এ আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী জিএম কামরুজ্জামান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রাতে যশোর রাজারহাট মোড়ের একটি পিকআপ গাড়ির ধাক্কায় অপর পিকআপের শাহবুল মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে আহত শাহাবুলকে হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঢাকা মেট্রো ড-১২-১৪৩৬ পিকআপটি জব্দ করে। এঘটনায় নিহতের ছেলে শিমুল হোসেন বাদী হয়ে অপরিচিত গাড়ি চালককে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।

পিকআপটির মালিকানা দাবি করে জিম্মায় নেয়ার জন্য যমুনা ব্যাংক লিমিটেড ও র‌্যনকন অটোমোবাইলস লিমিটেডের রিকভারি অফিসার রমজান আলী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। পরে আবেদন নামঞ্জুর হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিউ আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট শুনানি শেষে পিকআপটি দরখাস্তকারীর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। ১৪ সেপ্টেম্বর জুডিশিয়াল আদালতে জিম্মানামা জমা দেয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কোতয়ালি থানাকে জব্দকৃত গাড়ি আবেদনকারীর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। তবে আবেদনকারী থানা পিকআপটি আনতে গেলে কর্তৃপক্ষ দেননি।

গত ২৩ সেপ্টেমবর আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোতয়ালি থানায় হাজির হয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটন মিয়া তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এসআই লিটন মিয়া জানায়, আদালতের আদেশ তিনি মানেন না। টাকা না দিলে ওই গাড়িটি মাদক মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হবে। গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হবে। একইসাথে আবেদনকারীকে পেন্ডিং মামলায় চালান দেয়ার ভয় দেখানো হয়।

এদিকে এ ঘটনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা লিটন মিয়া পিকআপটি জিম্মায় না দিয়ে আদালতে একটি লিখিত অবহিতকরণ দরখাস্ত দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার মূল আসামিকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এমতাবস্তায় গাড়িটি জিম্মায় দিলে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।

বুধবার আবেদনকারীর আবেদনের শুনানি শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এক আদেশে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কোতয়ালি থানাকে দরখাস্তকারীর নিকট জব্দকৃত গাড়িটি হস্তান্তরের আদেশ দেয়া হয়। আদেশ অমান্য করা আদালত অবমাননার সামিল। ফলে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ২২:৫৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএআর/এমএআর