মাদকের ভয়াল থাবা শার্শা-বেনাপোলে, গত ২৬ দিনে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ আটক-৩৪

ক্রমেই মাদকের ভয়াল থাবা গ্রাস করে চলেছে শার্শা-বেনাপোলকে। দিন দিন মাদকের প্রকোপ বেড়েই চলেছে এ অঞ্চলে। নিত্য নতুন কৌশলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর মাদকের গডফাদাররা তাদের ব্যবসার কৌশল হিসাবে নারী-পুরুষ ও শিশুদের ব্যবহার করছে।

অনেক মাদক ব্যবসায়ী আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হলে, পরে দেখা যায় তারা বহনকারী। আর মাদকের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আটক করলেই তারা পাচারকারী হয়ে যায়। তাহলে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী কেন আটক হয় না?

কেউ না কেউ তো এসব বহনকারীদের মাদকের পেশায় যুক্ত করেছে। তাহলে কি গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে? পরিসংখ্যান বলছে গত ২৬ দিনে শার্শা-বেনাপোল অঞ্চলে নারী-পুরুষ ও শিশু সহ আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ৩৪ জন। ফেনসিডিলসহ নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ।

রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার সাতমাইল গরুর হাট এলাকা থেকে ফারুক হোসেনকে (২৪) ৪৯ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে পুলিশ। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ বেনাপোল ভান্ডারি মোড় থেকে ৭০০ গ্রাম গাঁজাসহ ভবারবের গ্রামের আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে সাবু (৩৯) ও যশোর সদর থানার তপশিডাংগা গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ছেলে মাহমুদ হাসান মিশন (২৮) আটক করে।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে বেনাপোল ছোটআঁচড়া মোড় থেকে বিজিবি ৩৬৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ভবারবেড় গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার বাবলু মোল্লার ছেলে সাদিকুজজামান রুবেলকে (২৪) আটক করে।

শুক্রবার (১৮সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮ টার সময় বাগআঁচড়া এলাকার সেতাই জোড়া ব্রীজ পাকা রাস্তার উপর থেকে একটি সিটি হান্ড্রেড মোটরসাইকেল ও ৪২পিস ইয়াবাসহ শার্শা থানার নাভারণ যাদব পুর গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে সোহাগ আলী (৩২) ও দক্ষিণ বুরুজ বাগান গ্রামের ইয়ছিন আলীর ছেলে আলমগীরকে (৩০) আটক করে।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টার সময় উপজেলার রাড়িপুকুর ময়নার বটতলা এলাকা থেকে ৮০ বোতল ফেনসিডিলসহ কলারোয়া থানার গয়ড়া গোয়াল বাতান গ্রামের আঃ আলিমের ছেলে শিশু শাহিনকে (১৪) আটক করে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে বেনাপোল পোর্ট থানাধীন গয়ড়া গ্রাম থেকে ২ কেজি গাঁজাসহ যশোরের অভয়নগর থানার গুয়াখোলা (মডেল স্কুল রোড) গ্রামের মৃতঃ রুহুল আমিনের ছেলে ইকবাল (৩১), তার স্ত্রী পারভীন বেগম বুলু (৩০) ও কোতয়ালী থানার নরেন্দ্রপুর (রুপদিয়া) গ্রামের আঃ আজিজ খানের মেয়ে রোকেয়া খাতুন (২০) পোর্ট থানা পুলিশ।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে শার্শা উপজেলার শালকোনা ফুলসরা গ্রাম থেকে ২৪ কেজি গাঁজাসহ শার্শা থানার শালকোনা গ্রামের আব্দুল মিয়ার ছেলে মেহেদী (১৯), একই গ্রামের শফিকুলের ছেলে রিয়াদ (২২) ও আশরাফুলের ছেলে সবুজ (২৮) আটক করে বিজিবি।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়কের আমতলা এলাকা থেকে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার সাতপুর গ্রামের শুভ আহমেদের স্ত্রী জুলেখা বেগম (২৫) ও একই গ্রামের আব্দুল্লাহর স্ত্রী আকলিমা খাতুন খাদিজা (২৬) আটক করে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯ টার সময় ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ শার্শা থানার গোগা সীমান্ত থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের কাছ থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে যায়। পরের দিন বেলা ১টার সময় পুলিশ আমলাই গ্রামের রিজাউলের ছেলে শামীম (২০), অগ্রভুলাট গ্রামের অহেদ আলীর ছেলে মামুন (৩২), শাহাবুদ্দিন মোড়ল (৩০) ও মোস্তফার ছেলে বিল্লালকে আটক করে।

রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বেনাপোল পৌর এলাকার ভবেরবেড় গ্রাম থেকে ৩ কেজি গাঁজাসহ যশোরের কোতয়ালী থানার নরেন্দ্রপুর (আমড়াতলা) এলাকার আঃ আজিজের মেয়ে মনি (৩৭) ও বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী শেখের মেয়ে ফাতেমা খাতুনকে (২৫) বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ১৫ বোতল ফেনসিডিলসহ শার্শা থানার জামতলা-শার্শা রাস্তার টেংরা এলাকা থেকে ঝিকরগাছা থানার গদখালী (মঠবাড়ী) এলাকার মৃতঃ জিয়াদ আলী গাজীর ছেলে আবুল হোসেন ব্যাচা (৪৮) ও যশোরের ষষ্টিতলা এলাকার মৃতঃ কাদের শিকদারের ছেলে জাফরকে (৫০) শার্শা থানার পুলিশ।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল এলাকার আমতলা থেকে ৭ বোতল ফেনসিডিলসহ একাধিক মামলার আসামি বাগআঁচড়া বকুলতলা এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী রিজিয়া বেগম ওরফে তানিয়াকে (৪২) আটক করে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে বেনাপোল পোর্ট থানার ঘিবা সীমান্তের কাঁচা রাস্তার পাশে থেকে ১১ টি পিস্তল, ৫০ রাউন্ড গুলি, ২২টি ম্যাগাজিন ও ১৯ কেজি গাঁজাসহ বেনাপোল পোর্ট থানার ঘিবা গ্রামের এজাবার রহমানের ছেলে সাজজুল (৩০), স্বরবাংহূদা গ্রামের শহিদ বিশ্বাসের ছেলে আনারুল (৩৪) ও একই গ্রামের সাবেদ বিশ্বাসের ছেলে আলমগীরকে (৪০) আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে শিকড়ী এলাকা থেকে ৮ বোতল ফেনসিডিলসহ বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামের হরিনাপোতা পাড়ার হাফিজুর রহমানের ছেলে মাসুম বিল্লাহকে (২২) আটক করে বিজিবি।

সোমবার (৩১ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টার সময় বেনাপোল সীমান্তের বারোপোতা গ্রাম থেকে ৫১ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বেনাপোল পোর্ট থানার মহিষাডাঙ্গা গ্রামের মোসারফ হোসেনের ছেলে রুবেল হোসেনকে (২৮) আটক করেছে র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব-৬।

রবিবার (৩০ আগষ্ট) বিকালে শার্শা থানার ছোট নিজামপুর গ্রাম থেকে ৩৬৫ বোতল ফেনসিডিল সহ শার্শা থানার বেদেপুকুর গ্রামের আনিছুর হোসেনের ছেলে খাইবার হোসেন (২০) ও দূর্গাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশা (২০) আটক করে পুলিশ।

শনিবার (২৯ আগষ্ট) সকালে শার্শা বাগআঁচড়া এলাকা থেকে ৪২ বোতল ফেনসিডিল সহ বাগআঁচড়ার সাতমাইল হাসপাতাল মোড়ের মৃতঃ সাত্তার গাজীর ছেলে ওয়াসিম শার্শাকে আটক করে
বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা।

শুক্রবার (২৮ আগষ্ট) দুপুরে ৯০ বোতল ফেনসিডিলসহ বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর গ্রামের আমির আলীর ছেলে আমানকে সাদিপুর মাঠপাড়া থেকে আটক করে বিজিবি। বুধবার (২৬ আগষ্ট) সন্ধ্যায় শার্শা থানাধীন সেতাই গ্রাম থেকে পিরোজপুর সদর থানার দক্ষিণ নামাজপুর গ্রামের মৃত শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে আলী আহম্মেদকে ৭০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা কালিন সময়ে অধিক লাভের আশায়, কৌশলগত কারণে মাদকের গডফাদাররা এ পেশায় কখনো পুরুষ, কখনো নারী কিংবা শিশুদের ব্যবহার করছে।

পরিত্যক্ত অবস্থায় অহরহ মাদক তো উদ্ধার হচ্ছেই। যার কোন পরিসংখ্যান নেই। ফলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শার্শা উপজেলাবাসী। তবে, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হচ্ছে, এ অঞ্চলের মাদক নির্মূলে তারা সর্বদা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১৭:৩৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমএস/এমএএস