করোনার মধ্যে এবার চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা

মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তায় প্রবল বৃষ্টিতে উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপক‚লীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত বয়ে চলেছে। এর ফলে এ মাসের শেষ দিকে অথবা জুলাইয়ের প্রথম ভাগে দেশে বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বাড়ার আভাস থাকায় সংলগ্ন জেলার নিম্নাঞ্চলে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারি বর্ষণ হচ্ছে এবং নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় দুই সপ্তাহ ধরে তা অব্যাহত থাকতে পারে। ধারাবাহিক পানি বাড়ার কারণে জুনের শেষ সপ্তাহে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

আরও পড়ুন :
আক্রান্ত ৮৪ লাখ, মৃত্যু ৪ লাখ ৫৩ হাজার
আইসিসি সভাপতি হওয়ার পথ পরিস্কার সৌরভের

এ সময়ে উজানের পাহাড়ি ঢলের আভাস রেখে প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি দুই সপ্তাহে দ্রুত বাড়তে পারে। বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে কিছু স্থানে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসময় এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা সৃষ্টি করতে পারে।

পানি বাড়লেও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই আপাতত, তবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীতেও এক সপ্তাহ পানি দ্রুত বাড়তে পারে। আর জুনের শেষ সপ্তাহে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকায় পানি কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকায় হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরীতে কোথাও কোথাও পানি বিপদসীমার উপরে যেতে পারে জুনের শেষ সপ্তাহে।

আরও পড়ুন :
বুধবার পর্যন্ত দেশের কোন জেলায় কতজন করোনায় আক্রান্ত
৬২ ভাগ মানুষ উচ্চ ঝুঁকিতে
পাকা আম সংরক্ষণের উপায়

জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মৌসুমি ভারি বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

এদিকে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় আছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি অর্থাৎ ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।

এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণে নিষেধ করা হয়েছে।

জুন ১৯, ২০২০ at ১৩:৩৭:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভক/এমএআর