বনগাঁর হোটেলে আসমা হত্যা: ঢাকা থেকে প্রেমিক খুনি কাশেম আটক

ভারতের বনগাঁ আবাসিক হোটেলে যশোরের আসমা ইসলামের খুনি তার প্রেমিক আবুল কাশেমকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় নিহত আসমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেটি উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ঢাকার পল্লবী থেকে যশোরের ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে।

আটক আবুল কাশেম যশোর শহরতলীর পালবাড়ি গাজীরঘাট রোডের মৃত বশির মিয়ার ছেলে। রোববার তিনি যশোরের আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হত্যার কারণ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২৪ বছর আগে শাহানুর ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে সদরের ডাকাতিয়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর মেয়ে আসমা ইসলামের বিয়ে হয়। পারিবারিক বিরোধের কারণে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরপর আসমা তার সন্তানদের নিয়ে যশোর শহরের নওদাগাঁ গ্রামের মঞ্জু স্যারের বাড়ি ভাড়া থাকতেন। আর এরই মধ্যে আসমার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী শাহানুরের ঘনিষ্ট বন্ধু পালবাড়ি গাজীরঘাট রোডের আবুল কাশেমের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা দু’জনেই দুইজনকে বিয়ে করবেন বলে কথা হয়। সে কারণে আসমা ইসলাম যশোরের একটি শো-রুম থেকে কিস্তিতে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন কাশেমকে। কিন্তু তাদের মধ্যে কথা হয় কাশেম কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেন। কয়েকমাস যেতে না যেতে কাশেম কিস্তির টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন। ফলে আসমার মেয়ে মিশু প্রেমিক কাশেমের কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। এতে কাশেমের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত জানুয়ারি মাসে কাশেমকে সাথে না নিয়ে আসমা ভারতে যাওয়ার জন্য খালা পরিচিত মনোয়ারা নামে এক নারীর সাথে কথা হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে কাশেম তড়িঘড়ি করে পাসপোর্ট-ভিসা করেন। গত ১৫ জানুয়ারি আসমা এবং তার সেই খালা মনোয়ারা ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। আর কাশেম নিজের মত করে তাদের পিছনে রওনা করেন। আসমা ও মনোয়ারা বনগাঁ শহরের শ্যামা প্রসাদ নামে একটি হোটেলের ৬ নম্বর কক্ষে ওঠেন। তাদের পিছু নিয়ে কাশেমও একই হোটেলের ১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। তবে বেনাপোল সীমান্ত পার হওয়ার সময় আসমার সাথে কাশেমের কথা হয়। কিন্তু আসমার সাথে থাকা মনোয়ারা কিছুই জানতেন না। মনোয়ারাকে আসমা পাশের আরেকটি কক্ষে রাখেন। কাশেম রাতে আসমার কক্ষে গিয়ে কথাবার্তা বলেন এবং শারীরিক সম্পর্ক করেন। তবে মোটরসাইকেল ফেরৎ নেয়ার পূর্ব আক্রোশের কারণে ওই সময় কাশেম আসমাকে মারপিটের পর দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত দেন। এতে আসমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে শ্বাসরোধে আসমাকে হত্যার পর কাশেম দেশে ফিরে আসেন। পরদিন সকালে মনোয়ারা পাশের কক্ষ থেকে আসমার কক্ষে গিয়ে লাশ দেখেন। হোটেল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে তারা বনগাঁ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

এই ঘটনায় গত ৩০ জানুয়ারি আসমার ভাই সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। পরে আদালতের নির্দেশে যশোর কোতয়ালি থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সোমেন দাস ঢাকার পল্লবীর বাউনিয়াবাদ বস্তি বাজার এলাকা থেকে শনিবার রাতে কাশেমকে আটক করে যশোরে নিয়ে আসেন। এ সময় আসমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট কাশেমের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। রোববার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আসমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে কাশেম বলেছেন, তার কাছ থেকে মোটরসাইকেল ফেরৎ নেয়া এবং আসমা পুনরায় তার সাবেক স্বামী শাহানুরের সাথে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

কাশেম আরো জানিয়েছে, ভারতে আসমাকে হত্যার পরে যশোর হয়ে ঢাকা, নোয়াখালি এরপর জামালপুর পরে ঢাকার পল্লবীতে পালিয়ে থাকেন। সেখান থেকে আটক হন।

অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আকরাম হোসেন জবানবন্দি শেষে কাশেমকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।