জয়পুরহাটে ঝড়ে ৫৫ লাখ টাকার ফসল নষ্ট, গৃহহীন সাড়ে ৩ হাজারের অধিক

জয়পুরহাটে গত ২৪ ও ২৬ মে ঝড় ও বৃষ্টিতে বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছেন এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিও মারা গেছে আশঙ্কাজনক হারে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দফায় দফায় পরিদর্শন করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবীর। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।

জানা গেছে, গত ২৪ মে ঈদের আগের রাত ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ঝড় ও বৃষ্টিতে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ১১০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়। এ সময় সম্পূর্ণ ক্ষতি হয় ৬০টি ঘরবাড়ির। ওই রাতে ৮শ’টি গাছপালা ভেঙে পেড়ে, একটি গবাদি পশু ও ৫ হাজারটি হাঁস-মুররি মারা যায় এবং ২৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি অফিসের হিসাব মতে, কৃষকদের ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। ওই রাতের ঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন ২২০ জন মানুষ।

একই রাতে ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫২৪টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়। এ সময় সম্পূর্ণ ক্ষতি হয় ১০০টি ঘরবাড়ির। ওই রাতে ২ হাজার গাছ-পালা ভেঙে পড়ে, ৪০ হাজার হাঁস-মুরগি মারা যায়, ৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি অফিসের হিসাব মতে, কৃষকদের ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। ওই রাতের ঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন ৪১০ জন মানুষ।

একই ভাবে গত ২৬ মে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঝড় ও বৃষ্টিতে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ২৭০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়। এ সময় সম্পূর্ণ ক্ষতি হয় ১৫০টি ঘরবাড়ি। ওই রাতে ৬০০টি গাছ ভেঙে পেড়ে, দু’টি গবাদি পশু মারা যায়, ৭ হাজার ৪৫ টি হাঁস-মুরগি মারা যায় এবং ৭৬১ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই রাতের ঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে ৬২০ জন মানুষ। এছাড়া এ ঝড়ে ১০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। একই রাতে পাঁচবিবি উপজেলায় ৬৭৫টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়। ৯৩৫টি গাছ পালা ভেঙে পড়ে এবং সাড়ে ৭ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কালাই উপজেলায় ৪১৮টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয় এবং সম্পূর্ণ ক্ষতি হয় ৩২টি ঘরবাড়ি। ওই রাতে ১ হাজার ৫৭৬টি গাছ-পালা ভেঙে যায়, ১ হাজার ৭৫০টি হাঁস-মুরগি মারা যায়, ১ হাজার ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই রাতের ঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে ১২৪ জন মানুষ এবং ঘরের ওপড় গাছ পড়ে হারুঞ্জা আকন্দ পাড়ার বাসিন্দা মরিয়ম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়াও দু’টি অটোরাইস মিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই রাতে ক্ষেতলাল উপজেলায় ১ হাজার ৬২০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয় এবং সম্পূর্ণ ক্ষতি হয় ৬৫০ টি ঘরবাড়ি। এ সময় ২ হাজার ৫০টি গাছ পালা ভেঙে পড়ে, ১ লাখ ২ হাজার হাঁস-মুরগি মারা যায়, ১৫ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই রাতের ঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন ২ হাজার ২৫০ জন এবং ঘরের ওপড় গাছ পড়ে খলিশা গাড়ি মহল্লার জয়নালের স্ত্রী শিল্পী খাতুন (২৫), তার সাত বছরের ছেলে নেওয়াজ ও ৩ বছরের ছেলে নেয়ামুলের মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:
এমএম কলেজের ছাত্রী বিথীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক
ছেলে বউয়ের অত‍্যাচারে মা হলো বাড়ী ছাড়া
ঠাকুরগাঁওয়ের দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

আক্কেলপুর উপজেলায় ৫০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয় এবং সম্পূর্ণ ক্ষতি হয় ২৪টি ঘরবাড়ি। ওই রাতে ৯০টি গাছ-পালা ভেঙে পড়ে, ১ হাজার ৭৫০টি হাঁস-মুরগি মারা যায়, ৬৪০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গৃহহীন হয়ে পড়েন ৯৬ জন মানুষ।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মোফাক্ষারুল ইসলাম বলেন ‘গত দু’দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার পাঁচ উপজেলায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭টি ঘরবাড়ির, সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬টি ঘরবাড়ির, ঝড়ে পড়েছে ৮ হাজার ৫০টি গাছ, মারা গেছে ৩টি গবাদি পশু ও ১ লাখ ৫৬ হাজার ২শ’টি হাঁস-মুরগি, ২ হাজার ৭৪১ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে, গৃহহীন হয়ে পড়েছেন ৩ হাজার ৭২০ জন মানুষ এবং দুই পরিবারে চারজন মারা গেছেন। এছাড়া ১৫টি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘এ সময় মোট ৫৪ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে এবং ঝড়ে গাছ পড়ে নিহত দুই পরিবারের সদস্যদের দাফন কাজে ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যেই ৮০ হাজার টাকা নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ঝড় ও বৃষ্টিতে পুরো জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুদান পাওয়া মাত্রই তালিকা অনুযায়ী পৌঁছে দেওয়া হবে।’

মে ৩০, ২০২০ at ১১:৫৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আরআর/আরএইচ