সরকারী ৬০ বস্তা চালসহ ডিলার অবরুদ্ধ

যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি, কারচুপিসহ কার্ডধারীদের সাথে দূর্ব্যবহার এবং ভূয়া নামে চাল আত্মসাতের অভিযোগে বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বর ডিলার আসাদুল ইসলামকে বুধবার (২৭মে) সাতমাইল জিবলীতলা আইসি ক্যাম্পগেট মোড়ে তার নিজস্ব দোকানে ৬০বস্তা চালসহ শত শত জনগন ১৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।

জানা গেছে, উপজেলার বাগআঁচড়া জিবলিতলা আইসি ক্যাম্পগেট মোড়ে আসাদুল ইসলাম মেম্বরের দোকান থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রয় করা হয়।

এ কর্মসূচির আওতায় ৬ শ ৮০জন দুঃস্থ অসহায় সুবিধাভোগীদের জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও সে নিজে মেম্বর হওয়ায় বিভিন্ন লোকের আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তালিকায় তাদের নাম দিয়ে ভূয়া তালিকার মাধ্যমে সে নিজেই সেই চাল আত্মসাত করে।

বাগআঁচড়া খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান,৬৮০ জন উপকার ভোগীর জন্য আসাদুল মেম্বর গত ১৭মে রবিবার বাগআঁচড়া খাদ্য গুদাম থেকে ২০হাজার ৪০০কেজি চাল উত্তোলন করে।কথা থাকে যে সে ঈদের আগেই সে চাল গুলো উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করবে কিন্তু চাল সঠিক ভাবে বিতরন না করায় আজ ৯/১০দিন পরও চাল রয়ে গেছে।স্থানীয়রা অভিযোগ করেন রাতের আধারে চাল সরিয়ে ফেলেন ডিলার আসাদুল ইসলাম মেম্বর ।

১৭মে সে চাল উত্তোলন করলেও সে এক সপ্তাহ সময় পাবার পরও সে চাল বিতরণ না করে নানা তালবাহানা করতে থাকে।ঈদের দুদিন পর সকাল ৬টার দিকে তার দোকান থেকে চাল সরিয়ে ফেলতে গেলে স্থানীয় শত শত মানুষ আসাদুল ইসলাম মেম্বর কে তার ঘরে আটক করে অবরুদ্ধ করে রাখে।পরে খবর পেয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডলের নির্দেশে শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)এসি ল্যান্ড খোরশেদ আলম চৌধরী,বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইলিয়াছ কবির বকুল,বাগআঁচড়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান,বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিএম শরিফুল ইসলাম,শার্শা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ রায়,ট্যাগ অফিসার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

চাল বিতরনে কেন ১০দিন সময় নিলেন সবার এমন অভিযোগের উত্তরে আসাদুল ইসলাম মেম্বর জানান আমার ভূল হয়ে গেছে।আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিন।এসিল্যান্ড খোরশেদ আলম চৌধরী এসময় কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে চাল ৬০বস্তা চাল বিতরণের জন্য খাদ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

এসময় তালিকার ৫৭২ নম্বর কার্ডধারী মফিজউদ্দীন ৫৭৩ নম্বর কার্ডধারী সাঈদ,৫৭৮ নম্বর কার্ডধারী পঙ্গু ইউসুফ আলী,৭২৬ নম্বর কার্ডধারী হাছিনা খাতুনের স্বামী মুকুল হোসেন,আবু মুছার ছেলে ইয়াসিন আলী অভিযোগ করেন ১০টাকার চালের কার্ডে তাদের নাম থাকলেও তারা আজ ৪বছর যাবৎ কোন চাল পায়নি। এমন কি তারা জানতেনও না যে ঐ তালিকায় তাদের নাম আছে।তারা বিগত ৪বছরের চাল তারা ফেরত চাইলে পরিস্থিতি উৎতপ্ত হয়ে উঠে।স্থানীয় জনতা এসময় বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন।এমন শতাধিক ব্যক্তির নামে ভূয়া কার্ড করে ডিলার আসাদুল মেম্বর আত্মসাৎ করেন বলে এলাকাবাসীরা এসময় অভিযোগ করেন। তাছাড়া একই পরিবারে স্বামী,স্ত্রী,বাবা,মা,ছেলে মেয়ে সহ ৪জন,৫জন, ৭জন,৮জনের নামের তালিকাও দেখা গেছে।গরীব, দুঃস্থ মানুষের নামে কার্ড না থাকলেও তাদের পাশের বাড়ীর প্রবাসী, ও বিত্তশালীদের নামেও একাধিক কার্ড রয়েছে ।এছাড়াও ডিলার আসাদুল ইসলাম মেম্বর বেশ কিছু মানুষের কার্ড উপজেলায় পাঠানোর নাম করে আজ ৪বছর হাওয়া করে দিয়েছেন।বহু মানুষ বিভিন্ন কারনে তাদের চালের কার্ড হারিয়ে ফেললেও তাদের কোন নতুন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা না করে উল্টো বছরের পর বছর তাদের চাল দেওয়া বন্ধ রেখে নিজেই সেই চাল বিক্রি করে খেয়ে ফেলেছেন।এসব নানা অনিয়মের মধ্যে এখনো তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহন করে নাই।

ট্যাগ অফিসার সিরাজুল ইসলাম ও বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইলিয়াছ কবির বকুল,বাগআঁচড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ৪/৫জন সুবিধাভোগীদের চালের কার্ড থাকলেও তারা জানেনা তাদের নামে চালের কার্ড আছে। এই কার্ডে আসাদুল ইসলাম মেম্বর ৪বছর চাল উত্তোলন করেছে বলে সত্যতা পাওয়া যায়।তাছাড়া তালিকায় নাম আছে এমন বহুকার্ডধারীকেও এলাকায় সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।স্থানীরা বলছেন এগুলো ভূয়া নাম ঠিকানা। যাদের চাল ডিলার আসাদুল ইসলাম মেম্বর নিজেই আত্মসাৎ করে কালোবাজারে বিক্রি করেন।

একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করে জানান, আমাদের নামে চালের কার্ড থাকলেও আমরা জানিনা যে আমাদের নামে চালের কার্ড আছে। এই কার্ডে আসাদুল ইসলাম মেম্বর ৪বছর চাল উত্তোলন করেছে।এভাবে সে কালোবাজারে চাল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা বানিয়েছেন বলে স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন।এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অভিযোগ গুলো তদন্ত করবো,তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে সেই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।