রহস্যময় বিষাক্ত গ্যাসে ১৪ জনের প্রাণহানি

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী করাচির কিয়ামারি এলাকায় রহস্যময় গ্যাসের বিষক্রিয়ায় অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এ গ্যাসের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।

দেশটির সরকার গ্যাসের বিষক্রিয়ার কোনও কূল-কিনারা করতে না পারায় করাচির কিয়ামারি এলাকার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডন।

গত কয়েক দিন ধরে গ্যাস ছড়িয়ে পড়লেও এর উৎস খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির ফেডারেল ও প্রাদেশিক পরিষদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এ নিয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। রোববার প্রথমবারের মতো করাচির কিয়ামারি এলাকায় রহস্যময় এ গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর একদিন পর সামান্য বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকালের দিকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা গুরুতর আকার ধারণ করে। এ সময় নারী, শিশুসহ অনেকেই সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মুরাদ আলী শাহের কাছে দেয়া প্রতিবেদনে বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, গত ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
আরও পড়ুন:  করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশির অবস্থা আশঙ্কাজনক

প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে, এখন পর্যন্ত ২৫৮ জনের শরীর পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা শেষে আরও ২৩২ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে আরও ১২ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও আইসিসিবিএসে আরও অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণমূলক গবেষণার জন্য পাঠানো হয়েছে।

রহস্যময় এ গ্যাসের উৎস শনাক্ত এবং ছড়িয়ে পড়ার কারণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমনকি দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো বিশেষজ্ঞরাও এই গ্যাসের উৎস বের করতে সক্ষম হয়নি।

এ সঙ্কটের জন্য সয়াবিনের ডাস্টের ভূমিকা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্স। অন্যদিকে সিন্ধ প্রদেশের পরিবেশ কর্তৃপক্ষের সহায়তা বেসরকারি একটি সংস্থার অনুসন্ধানে ওই এলাকার বাতাসে মাতাতিরিক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড ও নাইট্রিক অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে।

বন্দরনগরী করাচির কিয়ামারি এলাকার এই পরিস্থিতি বিক্ষোভ উসকে দিয়েছে। ওই এলাকার শত শত মানুষ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেছেন। ফলে কিয়ামারি হয়ে করাচি বন্দর পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: বেগম জিয়ার জামিন শুনানি রোববার

কিয়ামারি রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা ও বিক্ষোভকারী জামাল খান বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। এরকম আধুনিক যুগে এসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ ও উৎস শনাক্ত করতে না পারার জন্য আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। তারা আসলেই কাজ করছে নাকি সত্য লুকানোর চেষ্টা করছে?

তিনি বলেন, এসব ছাড়াও সরকার এ এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের এ এলাকা কিংবা রাস্তায় এখন পর্যন্ত কেউই আসেনি। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা বিক্ষোভে সরকারি কর্মকর্তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তুলে নেয়া হলেও এখন আতঙ্ক ও ভয় কাটেনি সেখানকার বাসিন্দাদের।

সূত্র : ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

দেশদর্পণ/এসজে