‘মাদকপল্লী খ্যাত’ রায়পাড়ায় ফের মাদক ব্যবসা চাঙ্গা, ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িত অর্ধশতাধিক

যশোরের ‘মাদকপল্লী খ্যাত’ রায়পাড়া এলাকায় আবারও মাদক ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আগে মত প্রকাশ্যে মাদক বিকিকিনি হচ্ছে এখন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় এই মাদক বেচাকেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার ডিবি পুলিশ রায়পাড়া রেলগোট এলাকা থেকে ইয়াবাসহ তিন কারবারীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে যশোরে সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেনের মাদকের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ প্রশ্ন বিদ্ধ হতে শুরু করেছে।

যশোর ডিবি পুলিশ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শুক্রবার চাঁচড়া রেলগেট পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডের সামনে থেকে তিন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, সদর উপজেলার মÐলগাতি (পুলেরহাট) এলাকার আজিজুলের ছেলে গোলাম সরোয়ার রিটু, শহরের খড়কি এলাকার মন্টুর স্ত্রী সালমা খাতুন, তার বোন আরশাদ আলী মোল্লার মেয়ে স্বপ্না খাতুন। পরে পুলিশ তাদের কাছ থেকে ২০০পিচ ইয়াবা জব্দ করে। এ ঘটনায় যশোর কোতয়ালি মডেল থানায় ডিবি পুলিশের এসআই শামিম হোসেন বাদী হয়ে একটি মামরা করেছেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রেলগেট, রায়পাড়া, তুলোতলা ও আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক মাদক বিক্রেতা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। নতুন করে মাদকের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: আচার খেয়ে অসুস্থ্য ১২ শিক্ষার্থী, আচার বিক্রেতা আটক

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের শেষদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় রায়পাড়ায় মাদকের বেচাকেনা বেশ খানিকটা কমে যায়। ২০১৭ সালের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় শান্তিশৃঙ্খলা কমিটি এ এলাকার বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। শীর্ষ মাদক বিক্রেতা বেবীর চারটি বাড়ি, শিলি বেগমের একটি বাড়ি ভাঙ্গা পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও চাপের মুখে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোরের ৮৬৬ জন মাদক বিক্রেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর থেকে এ এলাকায় মাদকের বেচাকেনা বেশ কমে যায়। যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান মাদকের বিরুদ্ধে বেশ স্বোচ্ছার ছিলেন। যে কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা কোন ঠাঁসা হয়ে পড়ে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর শহরের রায়পাড়া, রেলগেট, তুলোতলা এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ও চোরচালানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। নব্বইয়ের দশকে এ এলাকা পরিচিত ছিল চোরাইপথে আসা ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, চাদরসহ বিভিন্ন পণ্যের মার্কেট হিসেবে। পরবর্তীতে হেরোইন ও ফেনসিডিল পাওয়া যায়Ñ এমন স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে এ রায়পাড়া। এক পর্যায়ে মাদকপল্লী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ওঠে এলাকাটি।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রেলগেট, তুলোতলা, রায়পাড়া এলাকায় এখন অর্ধশতাধিক মাদক বিক্রেতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। এরা এখন ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির তৎপরতা শুরু করেছে। বর্তমান পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন যশোরে যোগদানের পর মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। কিন্তু যশোরে মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। বরণচ’ মাদক ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পুলিশ সুপারের ঘোষণা কেবল লোক দেখানো কিনা ?
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

সূত্র জানায়, মাদক বিক্রেতারা কেউ কেউ পুলিশের সোর্স পরিচয়ে ইয়াবা বিক্রি করছে। আবার কেউ কেউ পুলিশকে ম্যানেজ করে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে অনেক মাদক ব্যবসায়ীর নিয়মিত যাতাযাত রয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবাসেবীদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে।

পুলিশের ভূমিকা সম্পকে জানতে চাইলে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক শাহজাহান আহমেদ বলেন, কারা মাদক ব্যবসা করে আমি জানি না। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। আমি নতুন এসছি, পুলিশের কেউ মাদক কারবারীদের যুক্ত আছে কি না খোঁজ নিতে হবে। তার পর বলতে পারবো।

এ প্রসঙ্গে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই মাদক উদ্ধার, বিক্রেতা আটক এবং মাদক আইনে মামলা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। ফলে যে-ই মাদক ব্যবসায় জড়িত হোক না কেন, পার পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।’

দেশদর্পণ/একে/এসজে