বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রা, অল্পনা অঙ্কনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রাজশাহী নগরীজুড়ে

বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বাংলা ও ইংরেজি ক্যালেন্ডারে তারিখে একই দিনে মেলেছে দিন দুটি। তাই উৎসবের কমতি নেই। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে আমেজ বিরাজ করছে। প্রকৃতি যেনো সেজেছে বসন্তের রূপে। যদিও শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটি। ছুটির দিনে প্রিয়জনের সময় দিতে পারছেন কর্মজীবীরা। তাই অনন্দের মাত্রা যোগ হয়েছে সব বয়সী মানুষের মনে।

ব্যস্ত শহরের ফুলের দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা। বিকিনিকিতে বেশ খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে ফুলের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই অসন্তষ। তুবও সবাই দিচ্ছে প্রিয় মানুষকে পছন্দের ফুলটি উপহার।

এদিকে, এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নানা আয়োজন করা হয়েছে। কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিঠা উৎসব, বর্ষ বরণে আনন্দ শোভাযাত্রা, অল্পনা অঙ্কনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সব আয়োজনে যেন স্বপ্নজয়ী তারুণ্যের ঢেউ লেগেছে।

আর বরাবরের মতো বসন্তের মূল আকর্ষণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস; বিশেষত চারুকলায়। প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে মিলেছে প্রাণের স্পন্দন। শুকনো পাতার মড়মড় ধ্বনি ভেঙে উৎসাহ-উদ্দীপনায় বন্ধু আর সহপাঠীদের নিয়ে সবাই মেতে উঠেছে বাসন্তী উৎসবে।

এছাড়া, এ দিন সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী কলেজ থেকে একটি বসন্ত রাঙা শোভাযাত্রা বের করা হয়। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ হবিবুর রহমান শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন।

এতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বাদ্য-বাজনার ছন্দে ছাত্রীদের হলুদ শাড়ি আর ছাত্রদের হলদে পাঞ্জাবি বরণে পুরো শোভাযাত্রা জানান দেয় শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী বসন্তের দিন। শোভাযাত্রাটি সোনাদীঘি মনিচত্বরসহ বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে শুরু হয় দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান।

কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, কলেজটিতে প্রতিবছর পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। তার অংশ হিসেবে এবছর ১৪টি স্টল নিয়ে এই উৎসের আয়োজন করা হয়েছে। এতে কলেজের ১৩টি ও একটি আনন্দধারা নামের প্রতিবন্ধী স্কুলের পিঠা স্টল অংশ নেয়। এতে প্রতিবন্ধীদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রও রয়েছে।

এদিকে, সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন স্পটে ঢল নেমেছে তরুণ-তরণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের। এছাড়া এবার বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস একইদিনে হওয়ায় ভিন্নমাত্রা পেয়েছে উৎসবে। মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, খোঁপায় গোঁজা গাঁদা ফুল, আবার কারও কারও খোঁপায় রঙিন ফুলের রিং, কারও খোঁপায় আবার দেখা গেছে ফুলের গাজরা।

আর ছেলেদের পরনে হলুদ অথবা সফেদ রঙের পাঞ্জাবি। এছাড়া এর বাইরের রঙের পোশাক পরেও শুক্রবার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে নগর যুবকদের। ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলের ক্ষুদ্র ক্যামেরায় উঠছে বড় বড় সেলফি তাদের। একইসঙ্গে তাদের পাশে আছে মধ্যবয়সী নর-নারী ও কোমল শিশুর দলও।

সকাল থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া পার্ক, বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে, টি-বাঁধ, ভদ্রার শহীদ মনসুর রহমান পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। কেউ বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে, কেউ প্রিয়তম, আবার কাউকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিকেলে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নামবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, মহানগীরতে শুক্রবার শোভাযাত্রা, আবীর ও ফুলের প্রীতিবন্ধনীর পাশাপাশি নাচ ও গানের আয়োজন চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। নগরীর ফুদকিপাড়া উম্মুক্ত মঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে এ জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। পুলিশের পাশাপাশি টহল দিচ্ছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।