করোনা ভাইরাস ও করণীয়

করোনা ভাইরাস বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং আতঙ্কিত বিষয়। চীনে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ইতোমধ্যেই ২১৩-এর অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সংক্রমিত হয়েছে আরো ৯ হাজারের অধিক মানুষ।WHO(ডব্লিউএইচও) কর্তৃক এটি মহামারী হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। শুধু চীন নয় এর ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে আশে পাশের দেশগুলোতেও। আরো ভয়ের বিষয় হল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পাওয়া যাচ্ছে এর সংক্রমণ।

বিস্তারিত জানাচ্ছেন,শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. এমএ মান্নান। তিনি জানান, করোনা গোত্রের এই নতুন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ না থেকে দিন দিন অন্যান্য দেশও ছড়িয়ে পড়ছে। যা এখন pandemic (পেনডেমিক)আকার ধারণ করেছে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে নাগরিক সতর্কতাই অত্যাধিক জরুরি।

এই রোগের লক্ষন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো দুর্বলতা অনুভব করা। জ্বর, হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং পরবর্তীতে নিউমোনিয়া, কিডনি ও হার্ট ফেইলিওর পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকির মুখে আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশে এর ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এখনো নিশ্চিত করে বলা কঠিন। সম্ভাবনা অনেক অংশে কম । এরই মধ্যে এয়ারপোর্টে সরকারের সচেতন ভূমিকার প্রশংসাও করেন তিনি।

এ ভাইরাসের প্রধান উৎস হলো বাঁদুড়, সাপ বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী। অন্যদিকে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনের অধিবাসীরা সাধারণত কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাদ্য পছন্দ করে এবং তাদের খাদ্য তালিকায় বাঁদুড়, ইদুর এবং সাপ জাতীয় খাবার রয়েছে। তাই এই নতুন করোনা ভাইরাসটি অতি সহজেই প্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে।

ভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. মান্নান জানান, এটি করোনা গোত্রের একটি নতুন ভাইরাস যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি এনভেলপড (আর এন এ) ভাইরাস। এটি সার্স বা মার্স জাতীয় ভাইরাসের চেয়ে একটু ভিন্ন। এটি মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অন্য মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এটি নিয়ে এখনো বিস্তর গবেষণা চলছে। সাপ হলো ঠান্ডা রক্তের প্রাণী অন্যদিকে বাঁদুড় উষ্ণ রক্তের প্রাণী। এটিই সার্স ভাইরাসের মিউটেশনের কারণ, যার নতুন আবির্ভাব 2019- nCoV বা Wuhan virus.

রোগীদের প্রাথমিক অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেউ এ ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হলে সাধারনত দুই-এক সপ্তাহ পর এর উপসর্গ দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগীর প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। অতি শীঘ্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ইতোমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (IEDCR), মহাখালী ঢাকা, হেল্প লাইন (029898796, 01937110011, 01937000011, 01927711784, 01927711785) খুলেছে যা ২৪ ঘন্টা সচল। কেউ নিজের মধ্যে উপসর্গ বা সন্দেহ দেখতে পেলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।