প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি

রাজশাহী নগরীতে প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন-রাত ট্রাক মোড়ে মোড়ে পরিবহন সেক্টরের লোকজনের প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় চলছে। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি দুইটি শ্রমিক সংগঠনের নামে একদল ক্যাডার এমন চাঁদাবাজি করছে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের পর থেকে নগরীতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি শুরু হয়।

চাঁদাবাজরা ট্রাকের পাশাপাশি মিনি ভ্যান, কুরিয়ার সার্ভিসের ভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কাভার্ড ভ্যানের মতো প্রায় দুই থেকে তিন হাজার পরিবহনে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে।

সরেজমিনে ঘুরে ও পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় কাশিয়াডাঙ্গা সড়ক থেকে শুরু করে নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক, আম চত্বর সংলগ্ন বিআরটিএর সামনে, শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের সড়কসহ তালাইমারি হয়ে নগরীর পূর্বে শেষ প্রান্ত কাটাখালি পর্যন্ত অন্তত ছয়টি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে প্রকাশ্যে চলছে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহনে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়। অথচ চাঁদা আদায়য়ের সংশ্লিষ্ট এই স্পটগুলোর একশ থেকে দুইশ গজের মধ্যেই রয়েছে ট্রাফিক চেকপোস্ট, পুলিশ বক্স ও থানা।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের ডিসি অফিসের কর্মচারীদের কর্মবিরতি ঘোষণা

নগরীর পশ্চিম তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিক থেকে পণ্যবাহী যে গাড়িই আসছে সেই গাড়ির চালকের কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। সংশ্লিষ্টদের দাবি টার্মিনাল ফিসহ রাজশাহী জেলা ট্রাক, ট্যাংক-লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে এই অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ব্যবস্থাপনায় নির্মিত ট্রাক টার্মিনালটি বৈধভাবে ইজারা নিয়েছেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা কামাল হোসেন রবি। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ বছরের জন্য নওদা পাড়ায় অবস্থিত এই টার্মিনালটি তিনি ইজারা নিয়েছেন। ইজারার শর্ত অনুসারে শুধুমাত্র এই ট্রাক টার্মিনালে প্রবেশ করা ট্রাকগুলো থেকেই টার্মিনাল ফি হিসেবে ৫০ টাকা অর্থ আদায় করা যাবে। কিন্তু ট্রাক টার্মিনালের ভেতরে কোনো ফি বা টোল আদায় করতে দেখা যায়নি।

তবে নগরীর বিভিন্ন মোড় ঘুরে দেখা গেছে আট থেকে ১০ জনের গ্রæপে বিভক্ত হয়ে একদল যুবক মোড়গুলোতে সশস্ত্রভাবে অবস্থান করছেন। মালামাল পরিবহনের ট্রাকসহ প্রায় সব ধরনের ছোট বড় যানবাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে অর্থ। না দিলে সেই ট্রাক বা যানবাহনের চালককে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন বালু ঘাটে চাঁদা ট্রাকের শ্রমিকের নামে চাঁদা আদায় করছে তারা।

রাজশাহী জেলা ট্রাক ট্যাংক-লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ আলীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনালের ইজারাদার কামাল হোসেন রবির দাবি এই চাঁদাবাজির সাথে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি বৈধভাবে আরডিএর কাছ থেকে ট্রাক টার্মিনালটি ইজারা নিয়েছে। তার লোকেরা শুধুমাত্র ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়কে টোল আদায় করেন।

তিনি আরও জানান, অন্য সকল টোল আদায় পয়েন্টগুলোতে অবৈধভাবে তার বৈধ ইজারার রশিদ ব্যবহার করা হচ্ছে। যা অবৈধ। তিনি নিজেও এর প্রতিকার চান।

কাশিয়াডাঙ্গা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (এসপি) হাতেম জানান, এই বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে কাল থেকে গুরুত্ব সহকারে সড়কে চাঁদাবাজির বিষয়টি তদারকি করা হবে।

বোয়ালিয়া জোনের এডিসি আব্দুল রশিদ জানান, বিষয়টি জানা ছিল না। বোয়ালিয়া জোন এখন রাস্তায় নজরদারি বৃদ্ধি করবে।

রাজশাহী নগরীর মোড়ে মোড়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি বিষয়ে কথা বলতে মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমার মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।

দেশদর্পণ/এমআরআর/এসজে