রাবি শাহ্ মখদুম হলে ৩০ বছর বন্ধ থাকা গ্রন্থাগার চালু

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সতেরোটি আবাসিক হল। বিভিন্ন হলগুলো তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। তার মধ্য শাহ্ মখদুম হল অন্যতম। শাহ্ মখদুম (এস এম) হলটি পূর্বে জরাজীর্ন অবস্থায় থাকলেও বর্তমান প্রাধ্যক্ষ আরিফুর রহমানের দায়িত্ব গ্রহনের এক বছরেই নানামুখি সংস্কারে হলটি নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে।

প্রাধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে হলটিতে ৩০ বছর বন্ধ থাকা গ্রন্থাগার চালু হয়েছে। এতে করে অনেক দু:ষ্প্রাপ্য বইয়ের জ্ঞান আহরণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যতে গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার বিষয়ক বই সংযোজনের পরিকল্পনা আছে। তাছাড়া, হলের মনোরম রিডিং রুম, সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ, প্রাধ্যক্ষের বাস ভবন সংস্কার, অতিথি কক্ষের সংস্কার, শহীদ ফারুক হোসেন অডিটোরিয়ামের মঞ্চের আধুনিকায়ন, খাবারের মান পর্যবেক্ষন ও সুষ্ঠু সিট বণ্টনের মাধ্যমে হলকে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বান্ধব করেছেন প্রাধ্যক্ষ।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফ বিন জহির বলেন, ইতোপূর্বে ৩ জন প্রভোস্টের তুলনায় আরিফ স্যার হলের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করছেন। তিনি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে হলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত, কি করলে হলকে সুন্দরভাবে ঢেলে সাজানা যাবে এনিয়ে একটি মতবিনিময় সভার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুচারুভাবে সকল সমস্যাগুলো সমাধান করেন। পূর্বে ছাত্রদের জন্য কোনো রিডিং রুম এবং হল লাইব্রেরিটি বন্ধ থাকায় আমাদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটতো। একারনে, একটি মনোরম রিডিং রুম তৈরি ও লাইব্রেরী খুলে দেয়ার উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন প্রাধ্যক্ষ স্যার। পরে হলের অভ্যন্তরে স্থান নির্ধারণ এবং রংকরণ, টাইলস ফিটিংস এবং প্রয়োজনীয় কাজ ( বৈদ্যুতিক লাইন, লাইট, ফ্যান) ও আববাবপত্র দ্বারা একটি রিডিং রুম প্রস্তুত করে তা আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এতে মাঝে মাঝে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা এসেও পড়াশুনা করে।

আরও পড়ুন:
পুরুষদের বিবাহ ভীতির ৬ কারণ
স্কুলের ছাদে মৌমাছি, আতঙ্কে ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী

আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, ইন্টারনেট সেবার ব্যাপারে বরাবরই আমাদের অভিযোগ ছিলো। পরে বিষয়টি প্রাধ্যক্ষ স্যারের দৃষ্টিতে আসলে হলের অভ্যন্তরে ১২ টি শক্তিশালী ওয়াই-ফাই টাওয়ার স্থাপন করে এবং এতে করে আগের তুলনায় ইন্টারনেট সেবা অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। বর্তমানে শাহ্ মখ্দুম হলে সবচেয়ে বেশি ওয়াই-ফাই টাওয়ার রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আবুল কালাম নামের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, পূর্বে হলটির আসবাবপত্র, জানালা-দরজা নষ্ট প্রায় হয়েছিলো এতে আমাদের প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হতো। বিষয়টি প্রাধ্যক্ষ স্যারের নজরে আসলে অতিথি কক্ষের সংস্কার- টাইলস পিটিংস, সোফাসেট, জানালা-দরজার পর্দাসংযোজনসহ এর রংকরণ কাজ করা করেন এবং সেই সাথে অতিথি কক্ষে হল পরিচিতি স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া, পত্রিকা কক্ষের মেঝেতে টাইলস স্থাপন, ডিসটেমবার এবং প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পাখা সংযোজন, হল মসজিদ- কমনরুম এবং রিডিং রুমে আইপিএস সংযোজনসহ হল মসজিদের ফ্লোরে কার্পেটিংয়ের ব্যবস্থা করে হলকে সজ্জিত করেছেন প্রাধ্যক্ষ স্যার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হলের সম্মুখ ভাগে পূর্ব- পশ্চিম বরাবর সৌন্দর্য বর্ধনের নিমিত্তে নতুন করে বাগানকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষের বাস ভবনকেও নান্দনিকভাবে সাজিয়ে বসবাস উপযোগি করা, শহীদ ফারুক হোসেন অডিটোরিয়ামের সংস্কারের কাজে মঞ্চের আধুনিকায়ন, সাউন্ড সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলমান, ছাত্রদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সার্চ লাইট স্থাপন করেছেন বর্তমান প্রাধ্যক্ষ।

রুমে রুমে গিয়ে ছাত্রদের সুবিধা- অসুবিধার খোঁজ-খবর নেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। বিষয়টিকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন তারা। এই প্রাধ্যক্ষের নানামুখী পদক্ষেপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমতো ইতিবাচক পোষ্ট করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ও হল সংস্কারের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ ড. আরিফুর রহমান বলেন, ছাত্রদের সুবিধার্থে শাহ্ মখদুম হল প্রশাসন নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। লাইব্রেরি খুলে দেয়ার সাথে সাতে বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকা অন্ত:কক্ষ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চালু করা হয়েছে। একারনে দীর্ঘদিন পর শাহ মখদুম হল আন্ত:কলেজ (এ্যাথলেটিক্স) প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। এবং আন্ত:কলেজ ওয়টারপলো ও সাঁতারে ২য় রানার আপ অর্জন করেছি। তাছাড়া, সাহিত্য- সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং হল ডিবেটিং সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে বলেন জানান তিনি।

ইতোমধ্য প্রথম বারের মতো সৃজনী নামে হল সাময়িকী প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। হল ডাইনিংয়ে স্থায়ী টেবিল এবং বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। হল ক্যান্টিনেও স্থায়ীবেঞ্চ ও টেবিল স্থাপন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রিক পাখা, লাইট সংযোজনসহ ও আনুষঙ্গিক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা। এছাড়াও ডাইনিং এবং ক্যান্টিন এর মধ্যে পার্টিশন দেয়াল তৈরি করা হবে, হল মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার, ছাত্রদের প্রয়োজনে আরো একটি রিডিং রুম তৈরি, কমনরুমের জন্য আধুনিক মানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং সংস্কার, ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত হবে এবং শিরোপা জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য নিয়োমিত তত্ত্বাবধান, হলের সকল বাথরুমে টাইলস স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার, হলের জানালা-দরজাসহ হলের বহিরাংশ রংকরণ করে নতুন রূপে ঢেলে সাজানোসহ পড়াশুনা ও বসবাসের সঠিক পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে সর্বদা তৎপর শাহ্ মখদুম হল প্রশাসন।

অন্যদিকে ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবার মান উন্নতকরণে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হয় এজন্য খাবারের মানে বিশ্ববিদ্যালয় শাহ্ মখদুম হল বরাবরই সেরা।

হলের সিট বন্টনের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান বলেন, আমি হলের দায়িত্বে আসার পর ছাত্রদের মেধার ভিত্তিতে, আর্থিক অসচ্ছ্বলতা এবং প্রতিবন্ধী ছাত্রদের বিবেচনাসহ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সিট বন্টন করে আসছি। ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান গত ০৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে শাহ্ মখদুম হলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ at ১২:৫০:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসএস/এআই