নিয়োগের শর্ত পূরণ না করায় ইন্টারভিউয়ের কার্ড পাননি মুস্তাফিজ: যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর ‘হিসাব কর্মকর্তা’ পদে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি ও বয়স বেশি হওয়ায় খান মুস্তাফিজুর রহমান প্রাথমিক বাছাইয়ে অযোগ্য বিবেচিত হন। ফলে তাঁর ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা সম্ভব হয়নি।

গত ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রি. তারিখে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে খান মুস্তাফিজুর রহমান ‘হিসাব কর্মকর্তা’ পদে নিজেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি যবিপ্রবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন। যা কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এসব অভিযোগের জবাব না দিলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

গত ৯ মার্চ ২০১৯ খ্রি. তারিখে ‘হিসাব কর্মকর্তা’পদে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত পদের জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে তিনটি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে এসএসসি ও এইচএসসি/সমমানের ৫ পয়েন্টভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে জিপিএ ৪ এবং স্নাতক ও  স্নাতকোত্তর/সমমানের পরীক্ষায় ৪ পয়েন্টের মধ্যে সিজিপিএ ৩ থাকতে হবে। অথচ খান মুস্তাফিজের রহমানের এসএসসিতে জিপিএ ৩.২৫ এবং  স্নাতক পর্যায়ে ২.৭৫ রয়েছে এবং বয়স ৩০ বছর ১০ মাস। সেই হিসেবে এ পদে আবেদনের ক্ষেত্রে তাঁর তিনটি শর্তের ঘাটতি রয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীর (ছ) নম্বরে উল্লেখ রয়েছে যে, উপাচার্য মহোদয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিভাগীয়/অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও বয়সের ক্ষেত্রে যেকোনো একটি শর্ত শিথিল করতে পারেন। খান মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) পরিচালিত হেকেপ প্রকল্পের আওতায় একটি উপ-প্রকল্পে কাজ করতেন। ফলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত নন। সুতরাং নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্যের পক্ষে কোনো শর্তই শিথিল করার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন:
মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তিকারী যুবক গ্রেফতার
আন্তজার্তিক দূর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে সুনামগঞ্জে শোভাযাত্রা

খান মুস্তাফিজুর রহমানের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমমানের ‘হিসাব রক্ষক’ (সর্বসাকুল্যে) পদে কর্মরত ছিলেন। প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘হিসাব কর্মকর্তা’ পদটি প্রথম শ্রেণি (নবম গ্রেড) কর্মকর্তার পদ। সেক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর যোগ্যতা এবং প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার যোগ্যতা কখনোই অনুরূপ হওয়ার সুযোগ নেই। এরপরেও খান মুস্তাফিজ কিভাবে নিজেকে ‘হিসাব কর্মকর্তা’ পদে যোগ্য বিবেচনা করলেন, সেটি একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন।

গত ২৯ মে ২০১৬ খ্রি. তারিখে আইকিউএসির প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক ইস্যুকৃত খান মুস্তাফিজুর রহমানের ‘হিসাব রক্ষক’ পদের নিয়োগপত্রের দুই নম্বর শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনার চাকুরি কালও পরিসমাপ্তি ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে পুনরায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিদানে বাধ্য থাকিবে না। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রি. তারিখে। তারপর দিন থেকে তিনি আর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক থাকার কারণ বা বাস্তবতা নেই।

খান মুস্তাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ‘হিসাব কর্মকর্তা’ পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে লিখিত, ব্যবহারিক এবং মৌখিক পরীক্ষার পর বাছাই কমিটির সুপারিশ মোতাবেক যে যোগ্য কেবল তাঁকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এখানে আর্থিক লেনদেন বা দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের সুনাম ও মর্যাদা হানিকর। যা মানহানির পর্যায়ে বিবেচিত হয়। সুতরাং কথিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার মর্যাদা রক্ষায় খান মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ফলে মুস্তাফিজুর রহমান গত ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রি. তারিখে সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত উদ্দেশ্যেমূলক, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার পূর্বক দুঃখ প্রকাশ না করলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

ডিসেম্বর ৯, ২০১৯ at ১৬:৪১:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/দেপ্র/এআই