রাণীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও বন্ধের জন্য সুপারিশ করা হবে : থানা শিক্ষা অফিসার

রাজশাহীতে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তে অসহযোগীতা করছেন রাণীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম।(৪ডিসেম্বর) বুধবার বেলা ১১টায় বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহিদ হাসান রাণীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ের তদন্ত আসেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের ১৮ জন সদস্যের কোন সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।

পরে এক এক করে ৪জন শিক্ষক উপস্থিত হন। এ সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক মুঠে ফোনে বার বার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি প্রধান শিক্ষক।  এর আগে গত মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে তদন্তে সহযোগীতার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে উপস্থিত থানার জন্য জানানো হয়। এ নিয়ে চারটি ডেট প্রধান শিক্ষক তদন্ত কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন।

তদন্তে সহযোগীতা না পেয়ে বোয়ালিয়া থানা অফিসার বিদ্যালয়ের সকলের উপস্থিতে বলেন, প্রত্যেক মাসে ৩লক্ষ টাকা সরকারী বরাদ্দ দেয়া হয় বিদ্যালয়টিতে। অথচো ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও কাঙ্খিত নয়। অতএব এমপিও বন্ধ করাসহ বিদ্যালয় বন্ধ করার সুপারিশ করা হবে।

অভিযোগ উঠেছে, রাণীনগর নৈশ বিদ্যালয়ে বছরে ৩৬ লক্ষ টাকা সরকারী বরাদ্দ অথচো বিদ্যালয়ে কাঙ্খিত ছাত্র-ছাত্রী নেই। তাছাড়া এমপিও ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষরা ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করতে ফিল্ড ওয়ার্ক করেননা। বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসেন ইচ্ছা মতো। ঠিকমতো ক্লাশে যান না। আড্ডাবাজি আর গল্প করে সময় কাটিয়ে ইচ্ছা মতো বাড়ি ফিরে যান।

শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম বিষয়ে খোদ প্রধান শিক্ষক জড়িত। তবে তিনি বলেন, আমি বাইরের লোক বলে ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই সকল অপকর্ম করতে বাধ্য করেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে তারা। আমাকে সামান্য টাকা দিয়ে ঢাকা হেড অফিসের কাজগুলি করিয়েছে।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, কাব্যতীর্থের শিক্ষিকা ববিতা ও সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষিকা শাহিমাকে অনিয়ম করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা জোর করে রেখেছেন নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খাতুন ও শারীররিক শিক্ষা’র শিক্ষক মোঃ আকরাম হোসেন সরকারের নিকট।

লাইব্রেরীর ৫৮০ কেজি বই বিক্রি। সরকারী বরাদ্দ কোন খাতে আসলে সেটা সরাসরি পকেটে। এ সকল বিষয় নিয়ে একধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর, জেলা শিক্ষা অফিসার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব ভার দেন তিনি।

তবে গত ১ মাস যাবত তদন্ত কার্যক্রমে সহযোগীতা তো দূরের কথা বিদ্যালয়েই উপস্থিত থাকেন না প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। এদিকে, নিয়ম ববহিভূত ভাবে নিয়েগ নিয়ে রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিতের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার সিংহ রায় চাকুরী করছেন। আর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ওই শিক্ষক রাবি থেকে অকৃতকার্য সার্টিফিকেট দিয়ে প্রায় ১৮ বছর রাণীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আরো পড়ুন:
বণ্যপ্রাণি তক্ষকসহ যুবক আটক
ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী হালিম গ্রেফতার

বর্তমানে ওই শিক্ষক রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ বিএড স্কেল নিয়ে মোঃ সাদেকুল ইসলাম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সকল বিষয় নিয়ে বিদ্যালয় দু’টিতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানান, রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আফিজুর হক।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর কোন স্কুলে এত অনিয়ম দুর্নীতি আর শিক্ষকদের অরাজকতা দেখা যায় না। এ স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এক প্রভাবশালী নেতা। আর তার কারনেই স্কুলটি ধ্বংসের দারপ্রান্তে। গত ১৫/২০ বছর যাবত রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে কোন প্রধান শিক্ষক থাকতে পারেন না। একমাত্র ওই প্রভবাশালী নেতার কারনে। তিনি পায়ে পা দিয়ে বিবাদ সৃষ্ঠি করেন আর প্রধান শিক্ষকের অফিসে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে তালা-ঝুলিয়ে দেন।

একাধিক স্থানীয়রা জানান, গত ৫ বছর আগেও রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও রানীনগর নৈশ উচ্চ বিবদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারনায় মূখরিত হয়ে থাকতো।  অথচো এখন শিক্ষকদের দূর্ণাম আর কাঙ্খিত পাঠদান না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির চেয়ে শিক্ষক কর্মচারীদেরই উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।

বিদ্যালয় দু’টিতে অনিয়ম আর দূর্নীতি মুক্ত করতে এ মাসেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয়রা। তারা আরো বলেন, রাস্তায় যখন দাঁড়াতে হবে তখন বিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম-দূর্নীতি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী,ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপিও প্রদান করা হবে।

০৪ ডিসেম্বর,২০১৯  at ২২:০৭:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/মারারা/এজে