মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বিষক্রিয়ায় মাছসহ জলজ প্রাণীর মৃত্যু

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানি থেকে বিভিন্ন জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী মরে ভেসে ওঠেছে। এতে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। তবে আজ থেকে দূর্গন্ধ কমে আসছে বলে জানান বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন রায়।

তিনি জানান গত শনিবার প্রথম মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানান।

এ ব্যপারে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, লোক মুখে খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে তার অফিসের দুই তথ্য সংগ্রহকারী মো: সামছুল হাসান ও মো: ইফেতেফার এর মাধ্যমে লোকজন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানি সংগ্রহ করে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেছেন। এতে তারা পানির প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পেয়েছেন।

তিনি জানান, পানি বিষাক্ত হওয়ার জন্য এমোনিয়া ও হাইড্রোজেন বাড়ার বিষয়টি অনুপস্থিত। ক্যামিকেল জাতীয় কোন সিমটমও পরিলক্ষিত হয়নি। এ সময় তিনি ধারণা করে বলেন, মাছ মারার জন্য কেউ পানিতে পাহাড়ি বিষ লতা ছেঁচে রস পানিতে দিতে পারে এর ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যেতে পারে। তবে তিনি মঙ্গলবার সকালে সরজমিনে গিয়ে বিষয়টি আরো ভালোকরে দেখবেন বলেও জানান।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মী সামির বলেন, গত শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে মাধবকুন্ড এলাকায় পর্যটক, পর্যটক পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন মাধবকুণ্ডের পানিতে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী ভেসে ওঠতে দেখেন। পরের দিন রবিবার মৃত মাছের কারণে মাধবকুণ্ড পর্যটন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, জলপ্রপাতের পানিতেও দুর্গন্ধ রয়েছে তবে আজ দূর্গন্ধ অনেকটা কম।

কুলাউড়া মৎস্য অফিসের তথ্য সংগ্রহকারী মো: সামছুল হাসান জানান, ভেসে উঠা মরা মাছ ও জলজ প্রাণীর মধ্যে রয়েছে, পাহাড়ি বামাস মাছ, কাঁকড়া, পুঁটি, পাহাড়ি চিংড়ি, পিপলা, ছোট বাইন, সরপুঁ ও ব্যাঙসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ কীটপতঙ্গ।

মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ আরো জানান, মারা যাওয়া মাছের মধ্যে বামাস মাছ খুবই বিপন্ন। এ গুলো পাহাড়ী ছড়ায় এবং নদীতে পাওয়া যায়। মারা যাওয়া বামাস মাছগুলো অনেক পুরাতন।

স্থানীয় লোকজন পর্যটকরা জানান, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মীরা মরা মাছ পানি থেকে তুলে অন্যত্র ফেলে দিচ্ছেন। গত শনিবার ও রবিবার মারা যাওয়া মাছের সংখ্যা বেশি ছিল। সোমবারও (৪ নভেম্বর) কিছু কাঁকড়া, বাইন, ব্যাঙ, পুঁটি, বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণী পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে।

সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে মাধবকুণ্ড জলপ্রাপাতে দেখা গেছে, স্থানীয় লোকজন কিছু মরা বামাস মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পঁচা মাছ পানি থেকে তুলে ফেলছেন। যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। কিছু মাছসহ জলজ প্রাণী জলপ্রপাতের ছড়ার আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। এগুলো থেকে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লিটন শরিফ জানান, পাহাড়ি ছড়ায় অনেক ধরনের মাছ থাকে। মাছ ধরার জন্য মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের উপরের অংশে কেউ বিষ প্রয়োগ করতে পারে। উপর থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্নার পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। এই পানি ছড়া দিয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওরে পড়ছে। পানি বিষাক্ত হলে হাওরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। হাওরের মাছ মারা যেতে পারে।

রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা তুহিন আলম নামে এক পর্যটক সাংবাদিককে জানান, পানিতে গন্ধ থাকায় তিনি পানিতে নেমে উঠে এসেছেন।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকার ব্যবসায়ী কবির আহমদ বলেন, শনিবার এসে পানির মধ্যে মরা মাছ ভাসতে দেখি। এই পানি হাকালুকি হাওরে যাবে। সেখানেও মাছ মরবে। তখন সেখানেও অনেকে মাছ ধরবে। এই পানি অনেকে খেয়ে থাকে। বিষ দেওয়া হলে মানুষ ও পশুপাখির ক্ষতি হবে।

মাধবকুন্ড ইকোপার্কের কর্মী সামির আরো বলেন, গত শনিবার সকালে এসে দেখছি মাছ মরা। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। তাই মাছ তুলে ফেলেছি। বেশ কয়েকটা মরা বামাস মাছ তুলেছি। কাঁকড়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছও ছিল। বিষ দেওয়া হলে; জগন্য কাজ করেছে।

এ ব্যাপারে সোমবার রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একটি মিটিংএ অংশগ্রহন করতে তিনি ঢাকা যাচ্ছেন। বিষয়টি তিনি অবগত নন, তবে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন।

এদিকে মৌলভীবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা মো: সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, পাহাড়ে বিভিন্ন চা বাগানে, সবজী ও ফলের বাগানে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, যা পানিতে মিশতে পারে। তাছাড়া এটি হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটি র্তীর্থস্থান এখানে অনেকে পূন্যস্নানও করেন। তাই এই পানির বিষক্রিয়ার কারন খুঁজে বের করার পাশাপাশি এ পানি পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানোরও দাবি জানান।

এছাড়াও দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ পানির বিষক্রিয়া অপসারণে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।

নভেম্বর ৫, ২০১৯ at ১২:৪৯:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম