পরিবারের সম্পৃক্ততায় বীভৎস নির্মমভাবে খুন হয় শিশু তুহিন

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এই হত্যা, “প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডে বাবা, চাচা, ভাই, বোন ও চাচী জড়িত “

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে রবিবার রাতে বীভৎস কায়দায় পাঁচ বছরের শিশু তুহিন মিয়া খুন হওয়া ঘঠনাটি। পাষন্ড হত্যাকারীরা এত ববর্রভাবে শিশুটিকে হত্যা করেছে দেখলেই গা শিউরে ওঠে।

সোমবার দিনভর এই মর্মান্তিক ঘটনাটি যারা শুনেছেন তাদের মনেই নাড়া দিয়েছে। কারা এই শিশুটিকে এভাবে বীভৎস কায়দায় খুন করেছে তা নিয়ে সবার ভেতরে ছিল কৌতূহল।

তবে প্রাথমিকভাবে এই খুনের পেছনে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা রীতিমত আঁৎকে ওঠার মতো। যাদের কাছে আশ্রয় পাওয়ার কথা তারই পরিবার শিশুটির খুনের সঙ্গে জড়িত! এমনকি তার বাবাও এর সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই নির্মম ও বর্বর এই পদ্ধতি অবলম্বন করে পরিবারটি।

সোমবার সন্ধ্যায় দিরাই থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এমনটিই জানান। তিনি আরো জানান, ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিনকে কেন মারা হয়েছে, কীভাবে মারা হয়েছে, কয়জনে মেরেছে পুরো ঘটনা জানা গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলবো না।

ঘটনার পর পর তুহিনের বাবাসহ থানায় নিয়ে যাওয়া ৬ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে শিগগিরই আদালতের মাধ্যমে পুলিশ রেকর্ড দিয়েই আসামিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। শিশুটির পিতা একটি হত্যা মামলার আসামীসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে তাই পারিবারিক সম্পৃক্তায় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে এই ঘটনাটি গঠতে পারে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত শেষ করি, তদন্তে প্রমানিত না হলে কাউকে হয়রানী করা হবে না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এসময় আরো বলেন, এ হত্যাকান্ডটি পূর্বশত্রুতার জের যাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তাদের মধ্যেই তিন-চারজন জড়িত আছেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই খুন করা হয় পাঁচ বছর বয়সী তুহিন মিয়াকে। এ ঘটনায় তুহিনের বাবাসহ ৬-৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয় পুলিশ।

আরো পড়ুন:
পটুয়াখালীতে জেলা শ্রমিক লীগের সদর উপজেলা শাখার কমিটি গঠন
বেনাপোল পৌরসভার টোল আদায়ের বিরুদ্ধে বৈঠক অনুষ্ঠিত

তারা হলেন নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মুছাব্বির, ইয়াছির উদ্দিন, প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম, চাচি খাইরুল নেছা ও চাচাতো বোন তানিয়া।

জানা যায়, রোববার মধ্যরাতে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার ভোরে নিহত শিশু গাছে ঝুলে ছিল আছে শিশুর তুহিনের লাশ। পেটের মধ্যে ঢুকানো ছিল দুটি ছুরি। ডান হাতটি গলার সঙ্গে থাকা রশির ভেতরে ঢুকানো আছে। বাম হাতটি ঝুলে আছে লাশের সঙ্গে। কেটে নেওয়া হয়েছে শিশুটির কান ও লিঙ্গ। আর তার পুরো শরীর ভিজে আছে রক্তে। এমন নৃশংস ভাবে তুহিনকে হত্যা করা হয় ।

পরে তার মরদেহ গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে যায়। খবর পেয়ে সকাল ১০ টায় পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত তুহিন উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরের আধিপত্য বিস্তার ও জমি নিয়ে বিরোধ চলছে।

তুহিন হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিতে দুই ব্যক্তির নাম লেখা ছালাতুল ও সোলেমান সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের লোক। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের ধারণা। এমন নৃশংস হত্যাকান্ড দিরাই উপজেলার মানুষ হতভম্ব। তাই তদন্ত করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী জানান স্থানীয়রা।

অক্টোবর ১৫, ২০১৯ at ০২:৫২:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/জাআভূঁ/এএএম