শেষ মুহূ্র্তের প্রস্তুতি চলছে, ঐতিহ্যবাহি পীর বলু দেওয়ানের মেলা

যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামের ঐতিহ্যবাহি পীর বলু দেওয়ানের মেলা উপলক্ষে শেষ সময়ের সাজানোর প্রস্তুতি চলছে । ইতি মধ্যে অনেক দোকান চালু হয়েছে, ক্রেতাদের নজর কাড়তে দোকান গুলোতে চলছে বিভিন্ন আলোর নজর কাড়া সাজসজ্জা।

ঐতিহ্যবাহি এই মেলাটি অনেক আগে থেকেই চালু হয় এই গ্রামে, তারপরে থেকে প্রতি বাংলা বছরের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবারই শুরু হয় । মেলাটি চলে ৭ দিন পর্য়ন্ত অনেক সময় তার কম বেশিও চলে থাকে। মেলাটি জমজমাট করতে ইতি মধ্যে একটি মেলা পরিচলনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটির কাজ হলো মেলার সকল ব্যবসায়ি ও ক্রেতা গণকে নিরাপত্তা দেওয়া ও সুন্দর ভাবে মেলাটি শেষ করা ।

মেলাটিতে আসা কাদের আলী নামের এক কসমেটিকস ব্যবসায়ি জানান, আজ সকালে আসলাম মেলা করতে, থাকবো মেলা শেষ আবদি। কতো বছর এই মেলা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৭-৮ বছর আগে চাচার সাথে এই মেলা করতে আসি, তারপর থেকেই প্রতি বছর এই মেলায় আসি ।

উজ্জল হোসেন নামের এক কাপড় ব্যবসায়ি বলেন, বলু মেলা আমাদের কাছে একটি ঈদের আনন্দের মতো, আমাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরা সারা বছর চেয়ে থাকে কবে বলু মেলা আসবে । সব মিলে বলু মেলা আমাদের কাছে ঈদের কোন অংশে কম নয় ।

যাকে ঘিরে এই মেলার সৃষ্টি তার সম্পর্কে হাজারও কিংবদন্তি বিদ্যমান। যা এখনো লোক মুখে প্রকাশ পায়। জানা যায়, পীর বলুহ দেওয়ান অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। লোকমুখে শোনা যায়, তিনি যা বলতেন তাই হতো। কিন্তু তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত ছিল রহস্যের জালে আবৃত।

শোনা যায় তিনি উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছুটি বিশ্বাস। তবে জন্মকাল সম্বন্ধে তেমন কোন তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। এ অঞ্চলের বয়স্ক লোকদের ধারণা, তিনি ৩ থেকে ৪’শ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন। তার কিংবদন্তি সম্পর্কে জানা যায়, বলুহর বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর তখন একদিন তার পিতার কাছে বলেন যে মাঠে গরু চরাতে যাবে। পিতার অনুমতি পেয়ে তিনি গরু চরাতে যান ব্যাদন বিলের মাঠে। গরুগুলো লোকের ক্ষেতের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে মনের আনন্দে আরাম করতে থাকেন পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ)। ক্ষেত মালিক বিষয়টি জানতে পেরে সমুদয় গরু খোয়াড়ে দেবার জন্য গরু একত্রিত করতে থাকে। এ সময় বলুহ ঘটনাটি দেখে সমস্ত গরু বক বানিয়ে পাশে একটি গাছে বসিয়ে রাখেন।

আরও পড়ুন:
শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি
সড়কে কেড়ে নিল পুলিশ এ এস আইয়ের জীবন

এর কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন হাজরাখানা গ্রামে তার মামা বাড়িতে। সে সময় তাঁর মামাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্বচ্ছল ছিল। তাই বলুহ অন্যের বাড়িতে নির্দিষ্ট মজুরিতে কাজ করতেন। একদিন গৃহ মালিক তাকে মাঠে যেয়ে সরষে মাড়াই করতে বলেন। কিন্তু তিনি সে কাজ না করে সরষের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেন। সংবাদটি গৃহস্থের কানে পৌঁছালে মাঠে গিয়ে দেখে সমুদয় সরিষা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তখন গৃহকর্তা রাগান্বিত হয়ে মারতে গেলে বলুহ হেসে উঠে বলেন সরিষা পুড়েনি। তারপর ছাই উড়িয়ে দেখেন একটি সরিষার দানাও নষ্ট হয়নি। সবাই অবাক হলো এবং ঘটনা চারিদিক ছড়িয়ে পড়লো।

সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯ at ২২:০৯:৩৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমআই/কেএ