ক্যাম্পাস পরিষ্কারের নামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোড়ানো হচ্ছে গাছ!

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর পাশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ইচ্ছা করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরী ভবনের পাশে বৃহৎ অংশজুড়ে গাছপালা পুড়ে গেছে৷ তবে ভবনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। কিন্তু ঘটনাটির সূত্রপাত সম্পর্কে কেউ বলতে পারেন নি। শুকনো ঝোপঝাড়ের কারনে আগুন দ্রুত সময়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলে কালো বর্ণ ধারণ করেছে আশেপাশের গাছপালা। ফলশ্রুতিতে আতংক বিরাজ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। অনেকেরই ধারনা কর্মচারীরা ইচ্ছে করেই ঝোপঝাড় পরিস্কারের জন্য এ কাজ করতে পারেন।

এর আগে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোলা রোড গেটের রাস্তার পাশে আগুন লাগে। সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, লাইব্রেরীর ভবনে আশেপাশে ঝোঁপঝাড় ও আবর্জনার স্তুপ দীর্ঘদিনের৷ ধারণা করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিরা সেগুলো পরিষ্কার করতে এসে আগুন ধরিয়ে দেয় ৷ পরবর্তীতে আগুনের তীব্রতা লক্ষ্য করে পালিয়ে যায় ৷ আগুনের তীব্রতা টের লাইব্রেরীর রিডিং রুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভবে আগুন নেভাতে কাজ করে৷ পরে নিরপত্তা কর্মীরা ও কর্মচারীরা এসে আগুন নিভানোয় সহযোগিতা করে৷

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী ভবনের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র অধিকাংশ মেয়াদ উত্তীর্ণ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের৷ বাসুদেব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রথম ৭ টা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র কাজে লাগাতে পারিনাই আমরা ৷

আরো পড়ুন :
>ইবি শিক্ষার্থীদের বহিরাগতদের মারধর
>উপাচার্য গণতন্ত্রহীনতার দায় এড়াতে পারে না

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আবু রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা লাইব্রেরীর রিডিং রুমে পড়তেছিলাম ৷ আমার মনে হয় পরিছন্নতা কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দিছে ৷ যখন দেখছে বেগতিক তখন পালিয়ে গেছে৷

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, আগুন কি কারণে লেগেছে সেটা বলা যাবে না, এটা অনুসন্ধানের বিষয়। আমরা অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

গাছে আগুন দেওয়া বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুব্রত কুমার দাস বলেন, প্রথমত গাছে আগুন দেওয়াটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত, সারাদেশে এখন গাছ লাগানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেখানে আমরা গাছগুলোকে যদি ধ্বংস করি, তাহলে এটি পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড গুলো একেবারেই ঠিক না। যারা এ বিষয়ে জড়িত তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করা উচিত৷

বরিশাল সদর ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশনের অফিসার আব্বাস উদ্দিন বলেন, আজকের তাপমাত্রা একটু বেশি ৷ হয়তোবা কেউ সেগারেটের অবশিষ্ট অংশ ফেলে দিয়েছে যার কারণে আগুন লেগেছে । আমরা খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌছাঁই। ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ আমরা এসে পানি দিয়ে ভালোভাবে নিভিয়ে দিয়েছি৷

এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি৷ কাজ চলছে।মেয়েদের হলের ঐ পাশটায় রাস্তা পরিস্কার করছে। তবে আজকে আমি নির্দেশনা দিয়েছি আমাদের সকল বিল্ডিং এর পাশ থেকে অন্তত ১০ ফিট করে জায়গা দ্রুততার সাথে কেটে ফেলার। কারা আগুন দিয়েছে সেটি খোঁজা হবে ৷

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারী মাঠ পরিষ্কার কর্মসূচি নাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর মো. নুর ইসলামের নেতৃত্ব একদল কর্মচারী কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোনে আগুন দেয়। এতে শহীদ মিনারের আশে-পাশে ও মক্তমঞ্চের পাশে লাগানো প্রায় অর্ধ-শতাধিক চারাগাছ পুড়ে যায়।

মার্চ ১৩, ২০২৩ at ২০:৪৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেহা/মমেহা