কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ সরকারের

ছবি- সংগৃহীত।

ডলারের বিপরীতে দেশে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে পণ্যের দাম। আমদানি ব্যয়সহ নানা খাতে খরচও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আবার বাড়তি খরচ মেটাতে চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব বাড়ছে না। এসব কারণে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে ঘাটতি মেটানোর অন্যতম খাত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেছে নিচ্ছে সরকার। ফলে ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই শেষ ভরসা সরকারের। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের দায় বা ঋণ বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। শুধু এক বছরের ব্যবধানেই সরকারের দায় বেড়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। বিদায়ি বছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ২ লাখ ২১ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৮১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের ব্যাংক ঋণস্থিতি ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) ঋণ বেড়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছর এবং অর্থবছর-সব হিসাবেই ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার অঙ্ক অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) ঋণ বেড়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণের অঙ্ক ছিল মাত্র ২৪ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছর এবং অর্থবছর-সব হিসাবেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার অঙ্ক অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সরকারকে ঋণ বাড়িয়ে না দেয় তাহলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনার দিকে মনোযোগী হবে। এতে দেশের ঋণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

আরো পড়ুন:
>আরও কমলো চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা
>বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ঋত্বিক-সাবা!

তিনি আরও বলেন, ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে সুদহার প্রায় ৯ শতাংশ বা তার বেশি এবং এতে কোনো ঝুঁকিও থাকে না। অপরদিকে ঋণ বিতরণ ও উত্তোলনে ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি নিতে হয়। তাই ব্যাংকগুলোকে যদি অধিক পরিমাণে বিল ও বন্ড কেনার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে তারা শূন্য ঝুঁকির বিল আর বন্ডই কিনবে। অপরদিকে ঋণ বিতরণ কমিয়ে দেবে। এতে দেশের শিল্প খাত ক্ষতির মুখে পড়বে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ালেও সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ধারের অঙ্ক কমানোর চেষ্টা করছে। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোর পুরোনো ঋণ পরিশোধে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৬ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এক বছর পর ২০২২ সালে যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমেছে ২৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতে ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা।

যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৬ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে তা থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩৬ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।

জানুয়ারি ১২.২০২৩ at ১০:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর