ক্ষেতলালে স্বাধীনতার ৫১ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

হান স্বাধীনতার ৫১ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের বেলতা বানদিঘি গ্রামের মৃত বছির শাহার ছেলে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দীন শাহ্ এর পরিবার। জানা গেছে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী অন্যদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের বেলতা বানদিঘি গ্রামের মৃত বছির শাহার ছেলে নবীর উদ্দীন শাহ্। তিনি ১১ নং সেক্টেরের ভারতে প্রশিক্ষণও নেন। পরে সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফেরার পথে (১০ডিসেম্বর) জেলার ধলাহার ইউনিয়নে জামাতী আর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হন শহীদ নবীর উদ্দীন শাহ্।

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধে যোগদান করায় নির্মমভাবে খুন হন অসংখ্য বাঙালি। তেমনই বর্বরতার শিকার শহীদ নাবীর উদ্দীন শাহ্ বিজয়ের আগ মুহূর্তে রাজাকারের সহায়তায় পাকসেনারা হত্যা করে নবীর উদ্দীন শাহকে৷ নিহত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন শাহার পরিবার আজো এ বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর পরিবারে রয়েছে একমাত্র ছেলে আঃ রাজ্জাক ও পাঁচ মেয়ে। ছেলে আঃ রাজ্জাকের সংঙ্গে এ ব্যপারে আলাপ হলে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। মায়ের মুখে শুনেছি আমার বাবা যুদ্ধে গেছে, যুদ্ধ চলাকালে এমন সময় খবর আসে আমার বাবা জামাতী ও পাকবাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন জেলার ধলাহার ইউনিয়নে। সেখান থেকে জেলার বাজলা স্কুল মাঠে নিয়ে আসে বাবাকে এবং তিন দিন আটক রাখে। তখন আমার মা এলাকা বাসির সহয়াতায় তখন কার ক্ষমতা ধর রাজাকার আঃ আলিমের সংঙ্গে যোগাযোগ করেন যাতে বাবাকে ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি।

আরো পড়ুন:
> কাজিপুরে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার তিন মাদক কারবারি
> ঝিনাইদহের ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম

বরং পরের দিন বাবাকে আক্কেলপুর নিয়ে এসে পাকিস্থানি মিলিটারিরা মেরে গণ কবর দিয়েছে। আমার বিধবা মা বাবার শোকে দিশেহার হয়ে পরেন৷ দেশ সাধীনের এক বছর পর আক্কেলপুর বধ্যভূতিতে এক হৃয়বিদারক ঘটনা ঘটে সরকারি অফিসারা আমাদের খবর দিলে আমি আমার মা সহ কয়েজক গিয়েছিলাম। আমার বাবাসহ অনেক লাশের কঙ্কাল তোলা হয়েছিলো, আমার বাবার পড়নে নতুন লঙ্গী ছিলো পিছনে তামার তার দিয়ে হাত বাধা ছিলো। তখন লোকজন কম ছিলো ভয়ে মানুষ জন সেখানে আসত না আমার সব ঘটনা এখনো মনে আছে। তখন আক্কেলপুর ব্যংকের মাধ্যমে সরকার আমাদের দুই হাজার টাকা দিয়েছিলো।

দেশ স্বাধীনের পর থেকে আমার মা বাবার শোকে কাতর খুব কষ্টে আমাদের মানুষ করেছে। দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে তবে আমার বাবা ও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু আমার বাবাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে তালিকাভুক্তি এখনো করা হয়নি।৷ বাবাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তালিকাভুক্ত করার জন্য কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দারে দারে ঘুরেছি। এরইমাঝে আমার মাও মারা গেছে। আমার শহীদ বাবার জন্য আক্কেলপুর বদ্ধভূতিতে গিয়ে পরিবারের সবাই কবর জিয়ারত ও দোয়াখায়ের করে আসি। আমার বাবার নাম ওই গন কবরের মধ্যে তিন নং সিরিয়ালে উল্লেখ করা আছে তবুও আমার বাবার নাম মুক্তিযুদ্ধের তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

  শহীদ নবীর উদ্দীন শাহ্ নাতি নাসির আক্ষেপ করে বলেন, আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান দেশে কত ভুয়া মুক্তিযুদ্ধা সম্মান পায়। রাষ্ট্রের কাছে আমার দাবি আমার দাদা এদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন পাকিস্তানি মিলিটারিরা দাদাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার দাদা রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান পাওয়ার যোগ্য। আমরা তো কোন সাহায্য চাইনি দাদা একজন শহীদ মুক্তিযুদ্ধা বাংলাদের ইতিহাসে তার নাম থাক এটি আামাদের শহীদ পরিবােরর প্রত্যাশা। শহীদ নবীর উদ্দীন শাহার গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, নবীর উদ্দীন যুদ্ধে গিয়েছিলো আমরা জানি। ভারত থেকে ট্রেনিং করে আসার পথে ধলাহার ইউনিয়নে আটক করে মিলিটারিরা। পাঁচ দিন পর গ্রামে খবর আসে পাকাস্তিনারা নবীরকে হত্যা করেছে। তখন ছোট গ্রাম ছিলো হাতে গনা কয়েকটি লোকের বসবাস কে রাখে কার খোজ। নবীর একজন শহীদ মুক্তিযুদ্ধা এলাকাবাসী চান শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হোক নবীরকে।

আরো পড়ুন:
> ফুলবাড়ীতে ট্রাক্টর চাপায় হেলপারের মৃত্যু
> শৈলকুপায় জমি বিক্রির নামে টাকা আত্মসাত, বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

সেইসঙ্গে দাবি জানান, সেই কবরটি সংরক্ষণেরও। শহীদ নবীর উদ্দীন শাহা্র স্ত্রী আকেলজান বেওয়ার ন্যাশলাল আইডি কাডে মৃত স্বামী নাবীর উদ্দীন শাহ্ এবং নবীর উদ্দীনের ছেলে আঃ রাজ্জাকের ন্যাশলাল আইডি কাডে পিতা মৃত নবীর উদ্দীন শাহ্। শহীদ নবীর উদ্দীন শাহার পৈত্রিক ভিটার আর এস খতিয়ানে নবীর উদ্দীন শাহা্র নাম লিপিবদ্ধ আছে। শহীদ নবীর উদ্দীনের পাঁচ মেয়ে এক ছেলে বড় মেয়ে মনোয়ারা মারা গেছেন এবং আক্কেলপুর বধ্যভূমি গণকবরে শহীদ নবীর উদ্দীন শাহার ন্যামপ্লেটে নাম সহ গ্রামের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে৷ বধ্যভূমি ও গণকবরটি অবস্থিত আক্কেলপুর সদর উপজেলার নিকটবর্তী আমুত্ত গ্রামের মাঠে। ১৯৭১ সালে ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে এখানে নিহত হন। শহীদদের স্মরণে এখানে একটি সৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জন মুক্তিযোদ্ধাও ছিল। ১৯৯৬ সালে আক্কেলপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন তালুকদার এই গণকবরের উপর একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান করেন।

তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ছয়জন গাড়োয়ান সহ এই গণকবরে শায়িত আছেন নাম না জানা অনেকে। তবে যাদের নাম জানা যায় তারা হলেন, ১. সাবের জোয়ারদার (গোপিনাথপুর) ২. তোফাজ্জল হোসেন (গোপিনাথপুর) ৩. নবির উদ্দিন শাহ্ (বানদিঘি) এ ব্যাপারে আক্কেলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ হাই জানান, এই পরিবারের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ। মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শামীম বলেন, একটি দুটি নয় মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন ঘটনা অসংখ্য রয়েছে কজনইবা মনে রেখেছে তাদের। দেশের জন্য আত্মত্যাগ করা এমন যোদ্ধাদের তালিকা করে যথাযথ মর্যাদা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ক্ষেতলাল উপজেলা সাবেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নবীর উদ্দীন শাহ্ জোরালো ভূমিকা রাখে।

পাকবাহিনি রাজাকার কর্তৃক হত্যা হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা প্রণয়ন করা হয় তাতে নবীর শাহ্ নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনির হাতে নিহত হন। নবীর উদ্দীন শাহার পরিবার আমাদের কাছে একবার এসে ছিলো ওনাদের বলেছি আক্কেলপুরে শহীদ হয়েছে ওখানে শহীদ নবীর শাহার তালিকাও আছে। ওখানকার সনদ আর মামুদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সনদ নিয়ে আমাদের ক্ষেতলাল মুক্তিযোদ্ধা অফিসে জমা দিলে আমরা শহীদ নবীর উদ্দীন শাহার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রেরন করবো৷ যেহেতু নবীর উদ্দীন একজন মুক্তিযোদ্ধা সেহেতু তার একটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সনদ থাকা প্রয়োজন।

ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ at ১৬:১০:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস