পত্নীতলায় এবার বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে আগুন

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা ফারজানা পারভীনের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার কমলাবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে ওই বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্রসহ গ্যারেজে থাকা ৫টি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে।

নির্বাচনের আগে আধিপত্য বিস্তারের জের ও ভোটের দিন সংঘর্ষের ঘটনায় ঘোষনগর ইউনিয়নের ফলাফল স্থগিত হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু বক্করের কর্মীরা রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বলে ফারজানা পারভীনের কর্মী-সমর্থকেরা অভিযোগ করেন।

আরো পড়ুন:
করোনা বিধি মেনে চলছে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি
দৌলতপুরের সেই দরবার শরিফে গ্রামবাসীর হামলা, ভাঙচুর আগুন লুটপাট, আহত ১০

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঘোষনগর ইউনিয়নে দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনার সময় পুলিশের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন উত্তেজিত জনতা পুলিশের দুটি গাড়ি ও ভোটের সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ফারজানা পারভীনসহ ১১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও আড়াই হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। ওই মামলায় ফারজানা ও তাঁর স্বামী মতিউর রহমানসহ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে ঘোষনগর ইউপি নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। ঘোষনগর ইউনিয়নের কমলাবাড়ি ও ঘোষনগর কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণ করা হবে।

কমলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১২ টার দিকে হঠাৎ করে ফারজানা পারভীনের বাড়ির গ্যারেজে আগুনের শিখা দেখতে পান স্থানীয়রা। ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন সহিংসতায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে বর্তমানে ওই গ্রাম পুরুষশূন্য। আগুন দেখে গ্রামের নারীরা প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে প্রায় আধা ঘন্টা পর পত্নীতলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও মহাদেবপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাঁরা প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বাড়ির প্রায় সমস্ত মালামাল পুড়ে যায়।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীনের মেয়ের জামাই আতিকুর রহমান জানান, তাঁর শাশুড়ি এবং শ্বশুর দুজনই বর্তমানে জেলে আছেন। তিনিও পরিবার নিয়ে নওগাঁ শহরে থাকেন। শ্বশুরবাড়িতে বর্তমানে কেউ নেই। এই সুযোগে গতকাল রাত ১২টার দিকে দুর্বৃৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেন। গ্রেপ্তারের ভয়ে আমার শ্বশুরের গ্রাম বর্তমানে পুরুষশূন্য। ফলে রাতে আগুন নেভানোর মতো কেউ ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসতে আসতে পুরো বাড়ি পুড়ে যায়। বাড়িতে ৫টি মোটরসাইকেল ও বহু মূল্যবান আসবাবপত্র ছিল। এছাড়া ঘর ভর্তি ধান ছিল। সব পুড়ে গেছে। প্রায় ১৫-১৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা নির্বাচনের আগে আধিপত্য বিস্তার ও নির্বাচনের দিন সহিংসতার ঘটনার জেরে প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু বক্করের লোকজন রাতের আঁধারে আমার শ্বশুরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

পত্নীতলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রায়হান ইসলাম বলেন, আগুনে বাড়ির অধিকাংশ মালামাল পুড়ে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমান কত হতে পারে তা এখনও নিরূপন করা সম্ভব হয়নি। এটা শত্রুতা করে ধরিয়ে দেওয়া অগ্নিকাণ্ড না শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ড তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

আজ শনিবার সকালে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) শামসুল আলম বলেন, আগুন লাগার ঘটনা জানার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাটি কিভাবে ঘটলো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা শত্রুতাবশত ঘটে থাকলে প্রকৃত দায়ীদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানুয়ারি ০৮.২০২২ at ১৩:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সারসা/মক