বেড়ার কালভার্টের বন্ধ পাইপ খুলে দিলেন উপজেলা প্রশাসন

পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের বাগজান গ্রামে কালভার্টের পাইপ বন্ধ করে মৎস্য শিকার করা সেই পাইপের মুখ খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং মাছ ধরার জাল বানাসহ সকল যন্ত্রাংশ উচ্ছেদ করে দিলেন বেড়া উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার “বেড়ায় কালভার্টের পাইপ বন্ধ করে মাছ শিকার, জলাবদ্ধতায় কৃষকের সর্বনাশ” শিরোনামে ছবিসহ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বিষয়টি নজরে আসে বেড়া উপজেলা প্রশাসনের।

বুধবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সবুর আলী’র নির্দেশনায় বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম জাহাঙ্গীর আলম এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ উচ্ছেদ অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন বেড়া মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম ও তার সঙ্গীও ফোর্স।

এসময় ঐ কালভার্ট এর সামনে জাল ও বানা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বাধা প্রদান করা মাছ ধরার সকল সরঞ্জাম উচ্ছেদ করা হয়। এতে ঐ এলাকার স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য উপজেলার বাগজান গ্রামে কালভার্ট দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল টেংরাগাড়ি নামের একটি বিলে।

এর ফলে একদিকে যেমন দুই হাজার বিঘারও বেশি আমনের খেত তলিয়ে ছিল তেমনি বিলের পানি না নামায় কৃষকেরা পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারছিল না। এ ছাড়া কালভার্ট বন্ধ করার কারণে ওই স্থানে পানির চাপে ভেঙে গেছে সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র পাকা রাস্তা। এ বিষয়ে এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

তবে প্রশাসন থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য তখনও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল না। প্রতি বছর বর্ষা শেষে বিল ও খালের পানি খালের সঙ্গে বসানো একটি কালভার্ট দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে যায়। কৃষকেরা প্রতি বছরই অপেক্ষায় থাকেন কখন বর্ষার পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হবে। কারণ বর্ষার পানি নেমে যাওয়া মাত্রই কৃষকেরা বিলের জমিতে আবাদ করা আমন ধান কেটে পেঁয়াজসহ মৌসুমী ফসলের আবাদ শুরু করেন।

কিন্তু এবারের মৌসুমে কৃষকেরা জলাবদ্ধতার কারণে পাকা আমন ধান যেমন কাটতে পারছিল না তেমনি সেই জমিতে পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলের আবাদও করতে পারছিল না। এর কারণ হিসেবে কৃষকেরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল ও বিলের পানি নিষ্কাশনে ব্যবহৃত একটি কালভার্টের পাইপ বন্ধ করে দিয়ে মাছ ধরার মহোৎসবে মেতে উঠে। এর ফলেই পানি নিষ্কাশন বন্ধ হওয়ায় দেখা দিয়েছিল জলাবদ্ধতা।

এছাড়াও এই মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই এলাকায় দুই-তিনটি পরস্পর বিরোধী পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এবারও মাছ ধরা নিয়ে দুই-তিনটি পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছিল তীব্র উত্তেজনা। তবে উত্তেজনা থাকলেও প্রভাবশালী পক্ষের লোকজন প্রতি বছরই একজোট হয়ে কালভার্টের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

আরো পড়ুন :
বগুড়ায় মেহেদী হত্যার রহস্য উন্মোচন উদ্দেশ্য অটোরিকশা ছিনতাই
কালীগঞ্জে বীজ ও সার বিতরন

কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ায় কিছুদিন আগে পানির চাপে ওই এলাকার একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এতে বাগজান, কুশিয়ারা, পাইকরহাটি, দমদমা, খাকছাড়া, তারাপুরসহ সাতটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। তবে এখন কৃষকেরা পাকা আমন ধান যেমন কাটতে পারবেন তেমনি মৌসুমি পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলের আবাদও করতে দ্রুত করতে পারবেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এসএম জাহাঙ্গীর আলম হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশনায় বেড়া মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় কালভার্টের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকা স্থান থেকে মাছ ধরার সকল যন্ত্রাংশ উচ্ছেদ করে করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকেরা মৎস্য বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে। এছাড়াও তাঁরাপুর গ্রামে প্রিতম্বরের জলা থেকে কিছু চায়না জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।’

নভেম্বর ০৩.২০২১ at ২০:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/হারহা/রারি