বদলগাছীতে শ্রমিক সংকটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভাল থাকায় সন্তুষ্ট কৃষকরা। তবে শ্রমিক সংকটের আশঙ্কায় কৃষকেরা পড়েছে চিন্তার। কিছু কিছু কৃষক ধান কাটতে শুরু করলেও এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা।

বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার ৯ শত ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্জিত হয়েছে ১১ হাজার ৭ শত ৫০ হেক্টর যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭ শত ৬০ হেক্টর বেশি জমিতে। এ বছর এই উপজেলায় প্রায় ১৪ টি জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। তবে এলাকার কৃষকরা ব্রিধান-৮১, ২৮, ১৫, ৫০, জিরা, কাটারি ও গোল্ডেন আতব জাতের বোরো ধান কৃষকেরা বেশি চাষাবাদ করে থাকেন।

কৃষি অফিস আরো জানান, স্থানীয় ও বহিরাগত মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক এ উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে থাকে। এর মধ্যে স্থানীয় শ্রমিক রয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার। আর বহিরাগত শ্রমিক আসে ৮ থেকে ৯ হাজার। সাধারণত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রংপুর ও নিলফামারির ডোমার উপজেলা থেকে শ্রমিকরা এ উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে আসেন।

বদলগাছী কোলা ইউপির কৃষক রয়েল বলেন, আমি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছি। ফলন আলহামদুলিল্লাহ বাম্পার হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ধান কাটা মাড়াই শুরু হবে। আকাশ ভালো থাকলে বিঘা প্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ হারে ধান ঘরে তুলতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে কাঁচা ধানের মূল্য মণ প্রতি ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দামে যদি ধান বিক্রয় করা যায় তবে লাভ খুব ভালো হবে। কিন্তু ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছি। প্রতি মণে ৭ থেকে ৯ কেজি ধান মজুরি দিয়ে ধান কাটা মাড়াই করাতে হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখনো বাহিরের শ্রমিক আসতে পারেনি। বাহিরের শ্রমিক না আসলে অতিরিক্ত মজুরী দিয়ে ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে।

বালুভরা ইউপির কোমারপুর গ্রামের আনোয়ারুল হক সরদার জানান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিকদের দ্বারা ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করান। লকডাউনের কারণে শ্রমিক আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে তিনি ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। সময় মতো শ্রমিক না আসলে মাথায় বাজ পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী বলেন, চলতি মৌসুমের আবহাওয়া অনুকুলে থাকায়। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লকডাউনের কারণে বাহিরের শ্রমিক আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর ৮ হাজার ছয়শত ৩০ জন ধানকাটা শ্রমিকের চাহিদা দেওয়া আছে। বাহিরের শ্রমিক আসলে ধান কাটা মাড়াইয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।

ধান কাটা মাড়াইয়ের শ্রমিকের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, কৃষি অফিসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর ধানকাটা শ্রমিকের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। তারা আসলে বিভিন্ন স্কুলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রয়োজনে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হবে।

এপ্রিল ২৪, ২০২১ at ১০:৫২:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএসআরএস/এমআরএইস