ভোলার চরফ্যাশনে জোড়া খুনের জট খুলছে, খুনি শনাক্ত

১৪ দিন পর ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আছলামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির বাগান থেকে অজ্ঞাত মাথাবিহীন আগুনে পোড়া দুটি লাশের হত্যাকান্ডে জট খুলছে। খুনিকেও শনাক্ত করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে পরিচয় মিলেছে নিহতদের। পুলিশ জানিয়েছেন জমি বিক্রির টাকা লেনদেন নিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া মাথা দুটি দুলাল দাস (৫০) ও তপন দাস(৫৫) নামে দুই সহোদরের। তারা চরফ্যাশন পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত উৎকণ্ঠ চন্দ্র শীলের ছেলে। ৩ বছর আগে থেকে তারা ভারত গিয়ে বসবাস করছেন।

জমি বিক্রির টাকা নিতে এসে বিরোধে জড়িয়ে এই হত্যাকা- ঘটেছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আসামিরা। একইসঙ্গে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদেরও খুঁজছে পুলিশ।

এদিকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে বৃহস্পতিবার রাতে (২২ এপ্রিল) ৭ জনকে আটক করলেও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেলাল, কাসেম ও আবু মাঝি নামে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখায়। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ৩ জন হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছে। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে আরো আসামি জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাদের তথ্য প্রকাশ করছে না পুলিশ। শুক্রবার ১৬৪ ধারায় গ্রেফতার ৩ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(চরফ্যাশন সার্কেল) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন,জমি বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। তিন বছর আগে তপন ও দুলাল দুই ভাই আসলামপুর ইউনিয়নের বেল্লাল ও কাসেমের কাছে ১৫ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করেন। কিন্তু অগ্রিম ৩ লাখ টাকা দেওয়া হলেও বাকি ১২ লাখ টাকা জমি রেজিস্ট্রির পর দেওয়া হবে বলে জানানো হয় দুই ভাইকে। এরপর দুলাল-তপন ভারতে চলে যান।

একপর্যায়ে জমি রেজিস্ট্রি ও জমি বিক্রির বাকি টাকা নিতে ভারত থেকে তারা দুই ভাই বাংলাদেশে আসেন। গত বছর জমি রেজিস্ট্রি হলেও বাকি ১২ লাখ টাকা দেয়নি আসামিরা। তারা টাকা নিয়ে নানা রকম টালবাহানা শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে দুলাল ও তপনের আরেক ভাইকে দিয়ে চরফ্যাশনে ‘অগ্রক্রয়’ মামলা দায়ের করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন আসামিরা। জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে নানা কৌশল খুঁজতে থাকেন তারা। পরে টাকা ফেরৎ দেবে বলে তাদের ডেকে নিয়ে হত্যা করেন আসামিরা।

এদিকে রাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শুক্রবার পুলিশ ঘটনাস্থল সুন্দরীখাল থেকে হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত একটি ছেনি উদ্ধার করেছেন।

এর আগে আসামীদের তথ্যানুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেলে জনৈক মহিবুল্লাহ বাড়ির বাথরুমের ট্যাংকি থেকে দুটি মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ৮ এপ্রিল আসলামপুর ৭ নং ওয়ার্ডে ভূঁইয়াগো বাগান থেকে পোড়া দুটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় চরফ্যাশন থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) নুরুজ্জামান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি কেউ। বৃহস্পতিবার ২২ এপ্রিল মাথা দুটি উদ্ধারের পর তাদের শনাক্ত করা হলো।

যেভাবে হত্যা করা হয় দুই ভাইকে: আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, জমি বিক্রির টাকা দেওয়ার কথা বলে দুলাল দাস ও তপন দাসকে ডেকে নিয়ে যায় আসামিরা। গত ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করা হয়। তাদের যাতে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য গভীর রাতে পেট্রোল ঢেলে লাশ দুটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর রাতেই শরীর থেকে তাদের মাথা আলাদা করে স্থানীয় সুন্দরী খালে ফেলে দেয় আসামীরা। ৮ এপ্রিল পুলিশ যখন ঘটনাস্থলের পাশে নিহতদের মাথার খোঁজ করছিলো তখন রাতের আঁধারে খুনিরা খাল থেকে মাথা উঠিয়ে জনৈক মহিবুল্লাহ বাড়ির বাথরুমের ট্যাংকিতে ফেলে রাখে। হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার হত্যায় ব্যবহৃত ছেনি সুন্দরী খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(চরফ্যাশন সার্কেল) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন, গত দুই সপ্তাহের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা লাশ দুটি পরিচয় ও তাদের খুনীদের শনাক্ত করতে পেরেছি। খন্ডিত মস্তক ও হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত ছেনি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আসামীরা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। এছারা উদ্ধার হওয়ায় দুটি মাথার সঙ্গে পোড়া দুই লাশের মিল রয়েছে কিনা তা আরো গভীরভাবে নিশ্চিত হতে পুলিশ তাদের ডিএনও সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা মর্গে পাঠান। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে বিষয়ে যেসব তথ্য দিয়েছে, হত্যার মোটিভ ঠিক সেটিই ছিলো কিনা, এসব তথ্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। চাঞ্চল্যকর হত্যার জট খুলতে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এপ্রিল ২৩, ২০২১ at ২২:৩৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কেএস/এমআরএইস