বদলগাছীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষি জমিতে পুকুর খনন চলছেই

সৈকত সোবহান, বদলগাছী (নওগাঁ) : সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় কৃষি জমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন। কৃষিজমিতে নির্বিচারে পুকুর খননের কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তিন ফসলি জমি। এছাড়া খনন করা পুকুরের আশে-পাশের জমিতে ফসল চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। পুকুর খননের কারণে তিন ফসলি কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন অনেকটাই নীরব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের পাড়োরা গ্রামে একটি ফসলি জমির মাঠে ১০-১২ জন শ্রমিক দিয়ে পুকুর খনন কাজ চলছে। ওই জমির মালিক পাড়োরা গ্রামের বাসিন্দা মিনহাজুল সরদার। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ভূমি অফিসে তহসিলদার পদে চাকরি করেন। মিনহাজুল যেখানে পুকুর খনন করছেন সেই জমির চারপাশে ফসলি জমি। ওই জমিগুলোতে কোনোটিতে ধান, গম আবার কোনোটিতে পিঁয়াজ, রসুন ফসল আবাদ করা হয়েছে।

জানা যায়, পাড়োরা গ্রামে ফসলি জমির ওই মাঠে পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে স্থানীয় জমির মালিকদের পক্ষে দুই কৃষক জেলা প্রশাসক ও বদলগাছী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) ওই মাঠের অর্ধশতাধিক কৃষকের পক্ষে পাড়োরা গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আজম ও দিদারুল ইসলাম নামের দুই কৃষক এ অভিযোগ দেন।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বদলগাছী সহকারী কমিশনারের (ভূমি)-এসিল্যান্ডের কাছে জমির মালিকদের পক্ষে ওই দুই ব্যক্তি পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনার সুমন জিহাদী গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঘটনাস্থলে গিয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও কৃষি জমিতে পুকুর খনন করায় জমির মালিক মিনহাজুল সরদারকে পুকুর খননের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর দুই-তিন দিন পুকুর খননের কাজ বন্ধ রাখার পর প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আবারও পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মিনহাজুল সরদার।

অভিযোগকারী কৃষক ফয়সাল আজম, দিদারুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন কৃষক জানান, একটু বেশি লাভের আশায় তিন ফসলি জমি নষ্ট করে মিনহাজুল পুুকুর খনন করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, পুকুর খননের মাটি তুলে চার পাশে উঁচু করে পাড় বাধা হচ্ছে। এতে পুকুরের চারপাশের ফসলি জমিতে চলাচলের পথ বাধাগ্রস্থ হবে এবং ফসল চাষাবাদের জন্য সেচ প্রকল্প বাধাঁগ্রস্থ হবে। খননের পর পুকুর পাড়ে বড় প্রজাতির গাছ লাগালে পুকুর সংলগ্ন অন্যান্য ফসলি জমির চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর পাশাপাশি সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বদলগাছী উপজেলার দ্বিপগঞ্জ, পুকুরিয়া ও মিঠাপুর ও খাদাইল মাঠে নতুন করে পুকুর খননের কাজ চলছে।

গত চার-পাঁচ বছর ধরে নওগাঁর জেলার বদলগাছী উপজেলায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতেকরে কৃষি জমির পরিমাণ কমে গিয়ে দিন দিন ফসলের উৎপাদন হৃাস পাচ্ছে।

বদলগাছীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন জিহাদী বলেন, ‘কৃষি জমিতে পুকুর খননের আইনি কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে কিংবা অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। তারপরেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেকেই পুকুর খনন করছেন। এ ধরণের কর্মকা- সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলার পাড়োরা গ্রামে দুই দিন অভিযান চালিয়ে পুকুর খননের কাজ বন্ধ করে এসেছি। এরপরেও শুনতেছি ওই ব্যক্তি রাতের আঁধারে পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যে ব্যক্তি পুকুরটি খনন করছেন তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। এ জন্য আইন বিরুদ্ধ কাজ করায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হবে।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুক-অর-রশীদ বলেন, যে কোনো ব্যক্তি নিজের জমি ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতে পারবে এ ধরণের একটি আইন রয়েছে। এজন্য পুকুর খননের জন্য আমরা খুব বেশি অভিযান পরিচালনা করি না। তবে কোথাও পুকুর খননের ফলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় কিংবা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় সে সব ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী আমি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।