লালপুরে খলিসাডাঙ্গা নদীতে মাছ ধরার বাউত উৎসব

নাটোরের লালপুর উপজেলার খলিসাডাঙ্গা নদীতে উৎসব মুখর পরিবেশে মাছ ধরার বাউত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের খলিসাডাঙ্গা নদীর ময়না ঘাট এলাকায় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

নদীতে বর্ষার পানি নেমে যাওয়া অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে মৎস্য শিকারীরা পলোসহ নানা সরঞ্জাম দিয়ে এই মাছ শিকার করে। এই মাছ ধরার নাম স্থানীয় ভাষায় বাউত উৎসব বলে। বাউত বলতে সাধারণত মাছ শিকারিদের বোঝানো হয়। এ মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎসপ্রেমীরা একত্রে মিলিত হন। বর্তমানে এই উৎসব টি বিলুপ্তি প্রায়।

সকালে সরেজমিন খলিসাডাঙ্গা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, মৎস্য শিকারে আসা সকলকে উৎসাহ প্রদানে সকালে ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান নদীর পানিতে নেমে মৎস শিকারীদের সঙ্গে পলোদিয়ে মাছ শিকারের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়ে চলে দুপুর পর্যন্ত।

শৌখিন মাছ শিকারীরা হাত পলো, পাউ পলো, নেট পলো ছাড়াও ডোরা জাল, খেয়া জাল, হাতখড়া, বাদাই জাল, ঘের জালসহ নানা উপকরণ নিয়ে নদীতে নেমে পড়েছেন। বর্ষার পানি নেমে গেলেও নদীতে এখন হাটু পানি। আর এই পানিতে পাওয়া যাচ্ছে দেশি প্রজাতির নানা মাছ। এরমধ্যে বোয়াল, গজার, শোল, রুই, কাতলা, চিতল, পুঁটি, খৈলসা, টেংড়া, পাবদা, শিং মাছ অন্যতম। এ উৎসবে যোগদিতে লালপুর,বড়াইগ্রাম, ভবানীপুর, দুরদুড়িয়া, কদিমচিলান ও ওয়ালিয়া এলাকা মৎসপ্রেমীরা বেশি আসেন।

বড়াইগ্রামের ভবানীপুর থেকে আসা শৌখিন মাছ শিকারি উজ্জল বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা এই নদীতে মাছ শিকার করতে আসি। আমি একটা শোল মাছ পেয়েছি। মাছ ধরাটা আমার শখ।’

ওয়ালিয়া থেকে মাছ শিকার করতে আসা সিরাজুল ইসলাম জানান, পলো দিয়ে মাছ ধরাটা তার নেশা। মাছ পাই আর না পাই আনন্দটাই বড়। শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিবছর তিনি এই দিনটিতে মাছ ধরতে নদীতে আসেন। তবে আগের মতো নদীতে দেশি প্রজাতির মাছ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান,‘নদীতে মাছ ধরা বাউত উৎসবটি প্রাচীন গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এই উৎসবটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রতিবছরই এই বাউত উৎসবে কৃষক, জেলে, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আগামীতেও এই উৎসবটি অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।’

লালপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সামা বলেন, ‘বাউত উৎসব গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। দেশের অন্যান্য এলাকায় এই উৎসব বিলুপ্তির পথে। তবে এই এলাকায় ঐতিহ্যটি এখনও টিকে আছে।’

১৭ নভেম্বর, ২০২০ at ১৯:২৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআরটি/এমএআর