জয়পুরহাটে স্ত্রীকে গাছের সাথে বেধে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ, স্বামীসহ আটক ২

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে খাদিজা খাতুন (২০) নামে এক গৃহবধুকে লিচুর গাছের সাথে বেঁধে রেখে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোহার নিড়ানি গরম করে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরশহরের শ্রীকৃষ্টপুর স্কুলপাড়া মহল্লায় এই নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

ওই গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশী ও মহল্লাবাসীরা দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে তাঁকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করিয়েছেন। শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির চোখের সামনে পুত্রবধূকে এই নির্মম নির্যাতন চালালেও তাঁরা কেউই তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে নি।

খাদিজা খাতুন ওই মহল্লার শাকিল হোসেনের স্ত্রী। শাকিল তাঁর স্ত্রীকে গাছে বেঁধে রেখে লোহার নিড়ানি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় গৃহবধুর বাবা আইয়ুব আলী বাদি হয়ে আজ দুপুরে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ গৃহবধুর স্বামী শাকিল ও তার বড় ভাই আসলাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু ওবায়েদ। গত বুধবার রাত সাড়ে দশটায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, গৃহবধুর দুই গালে, দুই হাতে ও একটি পায়ে বান্ডিজ করা হয়েছে।

পাশে তাঁর স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ী ঘুরাফেরা করছিলেন। গৃহবধু তাঁদের ভয়ে কোনো কথা বলছিলেন না। সাবেক ওর্য়াড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম চপল তাঁদের ওর্য়াড থেকে সরিয়ে দিলে গৃহবধূ তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

সে মহিলা ওর্য়াডের ১৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গৃহবধূ খাদিজা খাতুন সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আমার আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ী আমাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। আমার স্বামী ভালোয় ছিল। শ্বশুর-শাশুড়ীর কারণে সে বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর করত। তাছাড়া সন্দেহের চোখে দেখত সে। এ কারণে মুঠোফোনও ব্যবহার করি না। বুধবার রাতে বাড়িতে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে বাড়ির আঙিনায় লিচুর গাছের কাছে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সে লিচুর গাছের সঙ্গে পিচমোড়া দিয়ে আমার হাত দুটি বেঁধে ফেলে। তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ী উঠানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর আমার স্বামী লোহার নিড়ানি গরম করে আমার দুই গালে, দুই হাতে, পায়ে ছ্যাঁকা দেয়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ওই গৃহবধূ আরও বলেন, স্বামী আমাকে নির্যাতন করে মেরেছে। তবুও স্বামী সংসার করতে চাই। এ কারণে মা-বাবাকে ঘটনাটি জানায়নি। আমার বাবার বাড়ি সান্তাহারের পোতা গ্রামে।

সাবেক ওর্য়াড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে বাড়ির দরজা বন্ধ করে গৃহবধুকে লিচুর গাছে বেঁধে রেখে শরীরে ছ্যাঁকা দিয়েছে নির্যাতন করেছে ওই গৃহবধুর স্বামী। ওই সময় গৃহবধুর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘটনাটি জানতে পারেন। তাঁরা মহল্লার লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ভেতরে ঢুকে গৃহবধূকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার নাজমুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, গৃহবধুর দুই গালে, দুই হাতে ও পায়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। স্বামী এ কাজটি করেছেন বলে গৃহবধূ আমাদের জানিয়েছেন।

গৃহবধূর স্বামী শাকিল হোসেন বলেন, ‘দুই দিন আগে আমার মুঠোফোনে কল দিয়ে একজন ছেলে আমার বউয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। আজকে আবার ওই নম্বর থেকে মিসড কল এসেছিল। তখন আমার ওপর ‘ভূত ভর’ করেছিল। এ কারণে বউকে লিচুর গাছের সঙ্গে বেঁধে গরম ছ্যাঁকা দিয়েছি।
গৃহবধূর শ্বশুর আব্দুস ছালাম বলেন, ছেলে তাঁর বউকে মারধর করত। আমারা রক্ষা করতে গেলে আমাদের ওপর চড়াও হয়। তারপরও ছ্যাঁকা দেওয়ার সময় বউকে রক্ষা করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর লোকজন দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতর ঢুকে বউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে
আসে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় বলেন, এ ঘটনায় থানায় ওই গৃহবধুর বাবা বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গৃহবধুর স্বামী ও তার ভাসুরকে আটক করে।