আমতলীতে ঢিলেঢালাভাবে চলেছে লকডাউন

বরগুনার আমতলীতে ঢিলেঢালাভাবে চলছে লকডাউন। বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা। উপজেলা ও পৌর শহরের আভ্যন্তরিণ সড়কগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে যানবাহন, হাট- বাজারগুলোতে উপচেপড়া ভীর, একেকজন একেকজনের গা ঘেষে বাজার করছেন। কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এছাড়া এখনো দিনে রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইক্রো, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ যোগে আমতলীতে বহু ব্যক্তি ও পরিবার প্রবেশ করেছে। এ কারনে উপজেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জানাগেছে, গত ৯ এপ্রিল আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জিএম দেলওয়ার হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এরপর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন। এরপর গত ১৮ এপ্রিল দুপুরের পর থেকে বরগুনা জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় পুরো জেলাকে লকডাউন ঘোষনা করে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আমতলীতে আরো দু’জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন :
করোনা : সুনামগঞ্জে আরো ৪ রোগী শনাক্ত
লকডাউন করা পরিবারের খোঁজ নেয়নি কেউ, অনাহারেই রাত্রি যাপন
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সাবিনা খাতুন ছবি নামের নারীর মৃত্যু

এ অবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মানুষকে ঘরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, পুলিশ বাহিনীর তৎপরতায় রাস্তায় যানবাহন এবং হাট-বাজারে মানুষের চলাচল অনেকটা সীমিত হয়ে যায়। সপ্তাহ খানেক মানুষ ঘরমুখো থাকলেও এখন তারা ঘরের বাহিরে আসতে শুরু করেছে। প্রশাসনের তৎপরতা কম থাকায় রাস্তায় যানবাহন ও লোকজনের চলাচল আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থাণীয় বেশ কয়েকজন সচেতন মানুষ অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন শুধু লকডাউন করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন। মানুষকে লকডাউন পালনে বাধ্য করতে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। গত দুই তিন দিন যাবত প্রশাসনের তৎপরতা কম থাকায় রাস্তায় যানবাহন ও লোক জনের চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন দুপুর দুইটা পর্যন্ত কাঁচা বাজার ও ভোগ্যপণ্যের বাজার খোলা রাখার অনুমতি থাকলেও বিক্রেতারা কৌশলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের সাটার বা দরজায় তালা দিয়ে ভিতরে অবস্থান করে অধিক রাত পর্যন্ত বেচাকেনা করছেন। দিনে হাট- বাজারে তিল ধারনের ঠাই থাকে না। একেক জন একক জনের গায়ের সাথে গা মিশিয়ে কেনাকাটা করেন। কোথাও মানা হয় না সামাজিক দূরত্ব। ফলে এ উপজেলায় মরণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহআলম মুঠোফোনে বলেন, মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি জনসচেতনতা ছাড়া মানুষকে ঘরে রাখা কঠিন। পুলিশ জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করে যাচ্ছে। জনসাধারণকে লকডাউন মানাতে পুলিশি তৎপরতা আরো বাড়ানো হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, বুধবার নির্দ্দিষ্ট সময়ের পরেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অপরাধে পৌর শহরের সাতটি দোকান মালিককে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, আমরা আর কি করবো। করোনায় মানুষ যাতে ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া না বের হয় সেজন্য উপজেলা লকডাউন করে দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। লিফলেট বিতরণ করেছি, ঘনঘন হাত ধৌত করতে ও মানুষকে ঘরে থাকতে উপজেলাব্যাপী মাইকিং করেছি। কর্মহীনদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিদিন মানবিক খাদ্য সহায়তা বাড়ীতে পৌছে দিচ্ছি। তার পরেও মানুষ লকডাউন তেমন একটা মানছেন না। কারন ছাড়াই বাসা থেকে বের হচ্ছেন। যারা বের হচ্ছেন তারা বাজারে এসেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন না। এখন লকডাউন মানাতে আগামীতে আমাদের আরো কঠোর হতে হবে