চুনারুঘাটে ব্যবসায়ী হত্যার প্রধান আসামি রঞ্জন পাল ৫ বছর পর গ্রেফতার

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর চুনারুঘাট উপজেলার ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নেতা বিশিষ্ট সালিশ বিচারক আলহাজ্ব  আবুল হোসেন আকল মিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি রঞ্জন পালকে দীর্ঘ ৫বছর ২৬দিন পর গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। রঞ্জল চন্দ্র পাল চুনারুঘাট উপজেলার পৌর শহরের  বাল্লারোডস্থ রবীন চন্দ্র পালের পুত্র। বুধবার  ২৭ সেপ্টেম্বর  রাতে হবিগঞ্জের কোর্ট ইন্সপেক্টর শেখ নাজমুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর  মঙ্গলবার সকালে প্রধান আসামি রঞ্জন পাল  হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আলীম সারের  আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শহিদুল ইসলাম   জানান, ২০১৮ সালের ০১ মার্চ ভোরে চুনারুঘাট শহরের বাল্লা রোড এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করতে যাওয়া  পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েগেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায়  তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতর বড় ছেলে এডভোকেট নাজমুল ইসলাম বকুল ঘটনার পরদিন রঞ্জন চন্দ্র  পালকে প্রধান আসামি করে ৪জনের নাম উল্লেখ  করে হত্যা মামলা দায়ের করেন । একই বছরের ৩০ মার্চ মামলার অন্যতম আসামি জসিম উদ্দিন ওরফে শামীমকে ঢাকার তেজকুনিপাড়ার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে দিন ৩১ মার্চ তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে মামলার ২নং আসামি চুনারুঘাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কুতুব আলী হবিগঞ্জ কারাগারে মারা গেছেন। ঘটনার পর থেকে মামলার প্রধান আসামি পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর পর মঙ্গলবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নিহতর ছেলে নাজমুল ইসলাম বকুল জানান, আমার পিতা মৃত আলহাজ্ব মোঃ আবুল হোসেন (আকল মিয়া) চুনারুঘাট ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি ও চুনারুঘাট উপজেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর সভাপতি সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থেকে  দীর্ঘদিন যাবৎ চুনারুঘাট থানার একজন বিশিষ্ট মুরুব্বী হিসাবে বিভিন্ন সালিশ বিচারে বিচারকের ভূমিকা পালন করেছেন। বাজারের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মৃত চান মিয়া মহাজন তালুকদারের  একটি ভুমি আসামি রঞ্জল পাল ও কুতুব আলী ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে  মৃত চান মিয়া মহাজনের মেয়ে শিরিনের দখলে থাকা ভুমি থেকে উচ্ছেদ করে দখলে যাওয়ার চেষ্টা করে আসামীরা । ভুক্তভোগী  শিরিন তখন বাজারের সভাপতির   আকল মিয়ার শরণাপন্ন হলে আকল মিয়ার  বলিষ্ঠ ভুমিকার কারনে রঞ্জন চন্দ্র  পাল ও কুতুব আলী দখলে যেতে পারেনি। এরই জেরে  ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা করে আকল মিয়াকে  হত্যা করে বলে দাবী নিহতর ছেলে এডভোকেট নাজমুল ইসলাম বকুলের । বকুল বলেন, ১ মার্চ ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে  উঠে  জামা কাপড় পরে  ফজরের নামাজ পড়ার জন্য বাল্লা রোডস্থ স্থানীয় আল-মদিনা মসজিদে যাওয়ার পথে চুনারুঘাট বাল্লা রোডস্থ মতিন মহাজন এর ভাড়াটিয়া রঞ্জন পালের মেসার্স সততা ট্রেডার্স দোকানের সামনে পৌঁছা মাত্রই  সম্পত্তির বিরোধের জেরে উল্লিখিত  আসামী  সহ অজ্ঞাতনামা দূর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা  ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি  দ্বারা তাহার মাথায় গুরুতর আঘাত ও জখম করলে তিনি  মাটিতে লুটিয়ে পড়লে  দূর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা টানা হেচড়া করে শহরের  পার্শ্বে থাকা বিছমিল্লাহ ট্রেডারস সংলগ্ন চুনারুঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার গলির পথে আনুমানিক ৫৭ ফুট  জায়গায় ফেলে  তাহার মাথায় ও মুখমণ্ডলে উপর্যপুরি আঘাত করে চলে যায়।  পরবর্তীতে  ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিগণ তাহাকে জথম প্রাপ্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকায় শোর চিৎকার দিলে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চুনারুঘাট পরে মুমূর্ষ অবস্থায় সিলেট নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ মামলায় এজাহারে সকল আসামি ধরা পড়লেও এর মধ্যে ২ নং আসামি কুতুব আলী কাউন্সিলর কারাগারে মৃত্যু বরণ করেন।
দেশদর্পণ/সুশ্/স্বরদা/ইর