আড়াই-তিন হাত বাঁশের সাথে পতাকা বেঁধে যশোরে বিএিনপির সমাবেশে নেতাকর্মীরা

আড়াই-তিন হাত লম্বা বাঁশের ও বিভিন্ন ধরনের লাঠি-সোঁটার সঙ্গে দলীয় ও জাতীয় পতাকা বেঁধে মিছিলসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যশোর সমাবেশে যোগ দেন। এতে শহরবাসীর মনে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়।

নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (২৭ মে) বিকালে যশোর শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে যশোর জেলা বিএনপি।

এদিকে, বাঁশের লাঠি নিয়ে সমাবেশে মিছিলসহকারে আসা নেতাকর্মীরা বলেন, ‘কয়েকদিন যশোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও প্রতিহত করার জন্য বাঁশের লাঠি নিয়ে এসেছি। এক কর্মী জানান, ‘আওয়ামী লীগের হামলা করলে তাদের গরম করে দিতে লাঠি নিয়ে এসেছি।’

এ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যেকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা তো হাসিনার আমলে আছি। এই আমলে বাড়ি আর কারাগারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। পুলিশ রাতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে; দিনে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা সব সময় পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। মুক্ত পরিবেশে বাইরে থাকলেও আমরা চার দেয়ালের মধ্যে কারাগারেই বন্দি রয়েছি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আলোর গতির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। সরকার একের পর এক দেশ ভিজিট করছে; দেশে ফিরে এসে তিনি উন্নয়নের গল্প শোনান। ৯০০ টাকায় গরুর মাংস খেতে হচ্ছে। যেখানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না সেখানে এতো উন্নয়নের গল্প কিসের। সরকার উন্নয়নের নামে দেশের মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।

গাজীপুর নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন থ্রি ফোরে পাশ করা নারীর কাছে আওয়ামী লীগ ফেল করেছে। আসলেই এই নির্বাচন সরকারের ভেলকিবাজী ছাড়া কিছুই নয়। ৫৪ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নয়; একমাত্র তত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই নির্বাচন সুষ্টু হবে। সুষ্টু ভোট হলে আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল, জেলা বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক, মোহাম্মদ মুসা, আব্দুস সালাম আজাদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। সমাবেশে যশোরের আট উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ খুলনা বিভাগারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের একদিন আগে মৌখিকভাবে শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়। একইদিন শহরের টাউন হল মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একটি শ্রমিক সংগঠনকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় প্রশাসন।

বিকেল ৩টার দিকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে মিছিলসহকারে সমাবেশে নেতাকর্মীদের পতাকার সঙ্গে লাঠি বহন কওে নিয়ে আসে। এতে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল।
বাঁশের লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, কিছু নেতাকর্মী বাঁশের লাঠিতে পতাকা বেধে নিয়ে এসেছিল। পরে নিষেধ করলে তারা ফেলে দিয়েছে।

যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসেন বলেন, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সমাবেশে লাঠি নিয়ে আসলেও তারা নিজেরা সেগুলো ফেলে দিয়েছে। সব ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে যশোরের প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীরা সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক থেকেছেন।