নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসা নিষেধের অভিযোগ ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুলের বিরুদ্ধে

ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নৌকা মার্কায় যারা ভোট দেবেন না, তারা যেন সেদিন ভোটকেন্দ্রে না আসেন।’

আগামী ১১ নভেম্বর যশোরের ঝিকরগাছায় ইউপি নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষে নৌকা মার্কার নির্বাচনি জনসভা থেকে তিনি এ কথা বলেছেন।

এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বারিক।

মো. বারিক রবিবার (৭ নভেম্বর) নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং তার পক্ষের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা চেয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনপত্রও জমা দিয়েছেন। ওই আবেদনের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের একটি অডিও ক্লিপও জমা দেওয়া হয়েছে।

আবেদনে মো. বারিক উল্লেখ করেছেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ৫ নভেম্বর বিকালে ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়নের লাউজানি স্কুল মাঠে নির্বাচনি জনসভায় বক্তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন- ‘কেউ নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে তাদের ভোটের মাঠে আসার প্রয়োজন নেই। আর যদি কেউ আসে, তাহলে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।’

১২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের বক্তব্যের সারকথা, ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আমির হোসেনকে ভোট দিতে হবে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বারিককে উদ্দেশ করে বলেছেন- তিনি যেন খুব শিগগির সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন এবং নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেন। ১১ তারিখের পর আর তাকে নৌকায় নেওয়া হবে না।

বক্তব্যের একপর্যায়ে মনিরুল বলেন, বারিকের পেছনে স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা ও একজন জামায়াত নেতার ইন্ধন রয়েছে। তিনি ওই দুই নেতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা ভিন্ন ভিন্ন দল করেন; নিজেদের দলীয় শৃঙ্খলা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন বর্জন করেছেন, আপনারা ভোটের মাঠে থাকবেন না। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলার জন্যে তিনি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন।

তিনি নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা সবাই জামায়াত-বিএনপি নেতাদের বাড়িঘর চেনেন। সবাই তাদের বাড়ি বাড়ি যাবেন, তাদের মিষ্টি করে বলবেন- ভোটের দিন মাঠে আসার দরকার নেই। তাদের বলবেন, ওইদিন আপনারা বাড়িতেই অবস্থান করবেন, না হলে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে মুরগির মাংস খাবেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বিএনপি-জামায়াত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা অশান্তি চাই না। আপনারা যদি অশান্তি সৃষ্টি করেন, তাহলে এই যে এখন আপনারা ভালোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ব্যবসা বাণিজ্য করছেন- সেগুলোতে সমস্যা হবে।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের দাবি, এটি তার বক্তব্য নয়। তিনি বলেন, আমি এ ধরনের বক্তব্য দিইনি। আমার বক্তব্য টেম্পারিং করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা অফিসার মো. মাহবুবুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের কাছে এমন একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তার অনুলিপি আমার কাছে এখনও আসেনি। অনুলিপির কাগজ এলে আমার ওপর যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক জায়গা থেকে কম-বেশি অভিযোগ আমার কাছে আসছে। প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।