১৯৭১-এর বরবরতার স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য আমগাছটি এখনো দাঁড়িয়ে!

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি পাক হানাদার বাহিনীর বরবর সেনারা নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। নির্বিচারে হাত্যা করা হয়েছিলো বাংলার মুক্তিকামী লক্ষ লক্ষ মানুষকে। ১৯৭১সালে সারাদেশের ন্যায় ৩০শে মার্চ উত্তরবঙ্গের মধ্যে নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ময়না গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রথম সম্মুখ স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

সেই দিন এই যুদ্ধে ময়না গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধীক মুক্তিকামী বীর বাঙ্গালী কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় ৭ জন বীর বাঙ্গালী যোদ্ধা সৈয়দ আলী মোল্লা, আয়েজ উদ্দিন মোল্লা, মসলেম উদ্দিন মোল্লা, আবুল কাশেম, সেকেন্দার আলী, খায়রুল আনামও আব্দুর সামাদকে এই আম গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মম ভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। এসময় সেই ব্রাশফায়ারের বুলেটের আঘাতে নির্বাক এই আমগাছটিও ক্ষতবিক্ষত হয়। এর মধ্যে গুলি খেয়েও গুরুতর আহত আবস্থায় প্রাণে বেঁচে যায় আব্দুস সামাদ। সেদিনের পাকহানাদার বাহিনীর এই নির্মম হত্যায় ৭ বীর বাঙ্গালী যেমন নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল তেমনি এই আমগাছ টিও সেদিন পাকবাহীনীর বন্দুকের সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিলো। সেই ব্রাশফায়ারের হাজারো গুলি বুকে নিয়ে এক পায়ের উপরে ভর করে আমগাছটি আজও দাড়িয়ে আছে বরবরতার স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: যবিপ্রবিতেই হবে করানো রোগী শনাক্ত

সরেজমিনে ময়নাগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে কালের স্বাক্ষী আমগাছটি বুকে শহীদের রক্ত ও হানাদার বাহিনীর বুলেট নিয়ে এক পায়ের উপরে ভর করে সবুজ পাতার মাথায় হাজারো মুকুলে ছেয়ে গেছে। পাকিস্তানি বরবরতার স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য কালজয়ী স্বাক্ষী হিসেবে আজও যেন ডেকে বলছে আমি আমগাছ প্রস্তুতু পাকিস্তানি বরবরতার স্বাক্ষী দিতে। বরবর বাহিনী সেইদিন এই নির্বাক বৃক্ষের বুকে গুলি চালাতে এতুটুকো দিধা করেনি।

এসময় ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ময়না গ্রামের ওয়ার্ড সদস্য হারুনর রশিদসহ এলাকার অনেকের সঙ্গে কথা হয় তারা বলেন, ‘ইতিহাসের স্বাক্ষী এই আমগাছটি আনুমানিক গত ২০১০ সালে লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ অর্থের বিনিময় গাছের মালিকের নিকট থেকে ক্রয় করে নেন। মৃত পায় এই আম গাছটিকে কালের স্বাক্ষী হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন ভাবে আমরা পরিচর্যা করে কোনরকম টিকিয়ে রেখেছি। এই গাছের চার পাশে ৪ শহীদের কবর অরক্ষিত আছে।’

লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি জানান,‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিবিজারিত স্থান, গণকবর ও বধ্যভূমী সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প আছে, সরকারী বিধি মোতাবেক আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো বলে জানান তিনি।’

‘শহীদের কবরে বেষ্টনীপ্রাচীরসহ নামফল উন্মোচন ও কালের স্বাক্ষী এই আমগাছটিকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে টিকিয়ে রাখতে সরকারী ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।’

দেশদর্পণ/এআরটি/এসজে