প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সুপারনিউমারারি প্রফেসর চালু হতে যাচ্ছে।
জানা যায়, আগামী ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভায় এই সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে এ পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
আরো পড়ুন :
> বেনাপোলে শিশু শিক্ষার্থীকে পেটানোর দ্বায়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
> ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হলো একটি ইলিশ
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিন্ডিকেট সদস্য জানান, ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচিতে নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি রয়েছে। তবে এর আগে কোনো পর্ষদে এ নিয়ে কোনো আলোচনা—সমালোচনা হয়েছে বলে শুনিনি। বিষয়টি সুন্দর হলেও এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা—সমালোচনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি।
জানা যায়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগের জন্য নীতিমালায় একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নেওয়া হলেও এক্ষেত্রে জাবির একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ অভিযোগ করছেন, গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে প্রফেসর ইমেরিটাস হিসেবে গোপনে নিয়োগ দিতে তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেটে নীতিমালা অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রফেসর ইমেরিটাস চালু করা শিক্ষার্থী—শিক্ষক সবার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কিন্তু একজন বিতর্কিত ব্যক্তি যিনি তার অপকর্মের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেছেন তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে নীতিমালা প্রনয়ণ করা, একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন না নিয়ে করা হলে এ উদ্যোগের পেছনের সদিচ্ছা বিতর্কের মুখে পড়বে।
প্রফেসর ইমেরিটাসের কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘গতবছর আমাদের সাধারণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ইমেরিটাস পদ ও সুপারনিউমারারি প্রফেসর পদ সৃষ্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, কমিটি গঠন করে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সেই নীতিমালার আলোকে যারা গ্রহনযোগ্য হবে তাদেরই সুপারিশ করা হবে। তবে আমি যেহেতু শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটিতে নেই, সেহেতু বর্তমান কমিটি এ বিষয়টি জানে কিনা— তা বলতে পারছি না। এছাড়া কমিটি গঠিত হলে একাডেমিক কাউন্সিলেও কমিটি করার কথা। আমি গত একাডেমিক কাউন্সিলে ছিলাম। আমার জানা মতে, এ বিষয়ে কোনো কমিটি গঠিত হয়নি।’
জানা যায়, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ছাত্রলীগের ‘একটি অঞ্চলভিত্তিক’ অংশকে মদদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বাধা দেওয়া ছাড়াও নানা অভিযোগ ওঠে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
তার ‘মদদপুষ্ট’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাদের হামলায় সংগঠনটির অন্য অংশের কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ নিহত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরপর ২০১২ সালের ১৭ মে উপাচার্যের পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে ইমেরিটাস প্রফেসর হওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিককে বলেন, ‘বাজে কথা বলো না। বাজে কথা বলছো কেন? তুমি কোন বর্ষের শিক্ষার্থী?’ এরপর পরিচয় পেয়েই ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু হাসান ও উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
আগস্ট ০৯, ২০২৩ at ১৯:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর