যশোরের চৌগাছায় জেলা প্রশাসনের আওতাধীন ১/১ খতিয়ানের প্রায় আট বিঘা সরকারী সম্পত্তি জাল দলিল করে দখলের চেষ্টায় মরিয়া এক ব্যক্তি। বছরের পর বছর ধরে নিজেদের দখলে থাকা সম্পত্তি হঠাৎ করেই বেহাত হওয়ার শংকায় কয়েকটি দরিদ্র পরিবার। ঘটনার সাথে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসীর।
সূত্র জানায়, চৌগাছা উপজেলা ভ‚মি অফিসের আওতাধীন জগদীশপুর ইউনিয়ন ৮০ নম্বর আড়পাড়া মৌজায় সরকারের ১/১ খতিয়ানের প্রায় ২ দশমিক ৫১ একর সম্পত্তি আছে। আড়পাড়া বাজারের পশ্চিম পাশে হতে শুরু এবং ভৈরব নদের পাশ দিয়ে এই সম্পত্তির অবস্থান। এ সব সম্পত্তির কিছু অংশ বসতি আর বাকি সব সম্পত্তি হচ্ছে ফসলি।
আরো পড়ুন :
> কালীগঞ্জে আত্মহত্যার প্ররোচনা করে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করায় মানববন্ধন
> তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দিতে হবে: ইসলামী আন্দোলন
গ্রামের বাঞ্চা কুমার, সুবোদ কুমার, ঠান্ডা কুমার, হয়রত আলী, সিরাজুল ইসলাম, অনিল কুমার, বাকের আলী, শুকুর আলী, মীর হোসেন, টিপু সুলতান, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ একধিক ব্যক্তি যুগযুগ ধরে সরকারী এই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন। বছরের পর বছর ধরে দখলে থাকা সম্পত্তি এক প্রকার হঠাৎ করেই নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করেন পাশ্ব¦বর্তী ফুলসারা ইননিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর ছেলে বহুল আলোচিত আলতাফ হোসেন। সরকার সমুদয় জমি তার নামে দিয়েছেন বলে দখলে থাকা ব্যক্তিদের জানায়। প্রমাণ স্বরুপ জমির কাগজপত্রও সে জমি দখলে রাখা ব্যক্তিদের সামনে হাজির করেন।
আলোচিত আলতাফ হোসেন কি ভাবে এই জমির মালিক বনে গেলেন এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও ভুক্তভোগীরা পড়ে যান চরম বিপাকে। তারা স্থানীয় ভূমি অফিস সহ চৌগাছা উপজেলা ভূমি অফিস, নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এমনকি আদালত পর্যন্ত ছুটাছুটি শুরু করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন জাল দলিল করে আলোচিত আলতাফ হোসেন জমি দখলের চেষ্টা করছেন।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা মোজেহার আলীর ছেলে আলতাফ হোসেন যশোর জেলা ১ নম্বর যুগ্ম জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করে, যার মামলা নম্বর ১৩। অবিশ্বাস্য এই মামলার রায় নিজের পক্ষে করিয়ে নিয়েছে সুচতুর আলতাফ হোসেন। এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে কষ্টে ফুষে উঠেছে সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসি জানান, সরকারী সম্পত্তি দখলে রাখা ব্যক্তির বড় একটি অংশ হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিরা সে সময়ে সরকারী সম্পত্তির সকল কাগজপত্র গ্রামের নায়েব মরহুম ডাক্তার তোফাজ্জেল হোসেনের কাছে গচ্ছিত রাখেন। সত্তর দশকের শেষ দিকে স্ট্রেটের ম্যানেজার তোফাজ্জেল হোসেনের বাড়িতে দুঃসাহসিক ডাকাতি সংঘঠিত হয়। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল ওই নায়েবের বাড়ি হতে বেলজিয়ামের তৈরি লাইসেন্স করা একটি একনলা বন্দুক, বুলেট এলজি একবক্স, বুলেট- ফোর একবক্স, সোনার চুড়ি হার কানের দুল, নগদ টাকা পয়সা ও আড়পাড়া ডিহী গোবর ডাঙ্গার অনেকগুলো দাখিলা প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের সাথে মূল্যবান সামগ্রী ডাকাতরা নিয়ে যায়। হঠাৎ করে আলতাফ হোসেন জমি তার দাবি করে সমুদয় জমি খালি করার হুমকি দেয়ায় এলাকায় নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, সত্তর দশকে আড়পাড়া গ্রামের নায়েব ডাক্তার তোফাজ্জেল হোসেনের বাড়িতে যে ডাকাতি হয় সেই ডাকাতির সাথে কি আলেচিত আলতাফ হোসেন জড়িত ? তাই যদি না হবে তাহলে ডাকাতির সময় খোয়া যাওয়া সরকারী খাস জমির কাগজপত্র সে কোথায় পেল ?
জমি দখলে রাখা আড়পাড়া বাঞ্চা কুমার বলেন, জমির মুল কাগজপত্র ডাকাতরা নিয়ে গেলেও স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে বাবা, কাকারা নিয়মিত দাখিলা সংগ্রহ করে আসছেন। বাবা, কাকারা মারা গেছেন, তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমরা ভোগ দখলে রেখেছি, আমরাও মৃত্যুর পথযাত্রী এখন হঠাৎ করে সৈয়দপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন জমি তার বলে দাবি করছেন। মীর হোসেন, টিপু সুলতান, সুবোধ কুমারসহ ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে থেকে সরকারী এই সম্পত্তি বাপ চাচারা দখলে রেখে ফসল উৎপাদন করেছে। অনেকেরই বাবা মারা গেছেন তাদের ওয়ারিশ হিসেবে এখন আমরা দখলে রেখেছি কিন্তু ওই আলতাফ জমি তার বলে দাবি করছেন, শুধু তাই না জমি ছেড়ে দিতে রীতিমত হুমকি দিচ্ছে। হযরত আলী বলেন, তাদের কোন জায়গা জমি নেই, কুঠিবাড়ি হিসেবে পরিচিত নদের ধারে এক টুকরা সরকারী জমিতে যুগযুগ ধরে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছি, এখন সৈয়দপুরের আলতাফ বলছে সমুদয় জমি তার আদালত তার পক্ষে রায় দিয়েছে তাই জমি খালি করে দিতে হবে। গরীব অসহায় এসব মানুষের জমি হাতছাড়া হওয়ার শংকায় এখন নাওয়া খাওয়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
এ বিষয়ে আলোচিত আলতাফ হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আদালতের রায়ে আমি বিজয়ী, তাই সমুদয় জমি এখন আমার। জগদীশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীন রাজনীতিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আড়পাড়া মৌজায় সরকারের ১/১ খতিয়ানের প্রায় ৩ একর সম্পত্তি সৈয়দপুর গ্রামের আলতাফ তার পক্ষে রায় করিয়ে এনেছে বলে ভুক্তভোগীরা আমাকে বলেছে। এটা কতটুকু সত্য তা জানিনা তবে জমিগুলো জেলা প্রশাসনের সম্পত্তি বলে তিনি দাবি করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, নির্দেশ পেলে সরকারী খাস সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে যশোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তুষার কুমার পাল বলেন, ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারের খাসজমি দখলের কোনো সুযোগ নেই। জালিয়াতি প্রমাণ হলে আইন অনুযায়ী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগষ্ট ০১, ২০২৩ at ২১:১১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর